গাজায় অনাহারে ১০ শিশুর মৃত্যু, যুদ্ধবিরতির আশা রমজানে
২ মার্চ ২০২৪ ১০:০৩
গাজার হাসপাতালে অন্তত ১০ শিশু অনাহারে মারা গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিএইচও)। এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) গাজা শহরে খাদ্য সহায়তার অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী রমজানের মধ্যে হামাস ও ইসরাইল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পারে বলে আবারও আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খবর আলজাজিরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালে অন্তত ১০ শিশু অনাহারে মারা গেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ঘটনাকে আরেকটি ‘দুঃখের শুরু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ডব্লিউএইচও’র মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার।
এক্স’এ (সাবেক টুইটার) করা একটি ভিডিও পোস্টে ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেছেন, ‘এগুলো দফতরের তথ্য এবং আপনারা সবাই যেমন উল্লেখ করেছেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা যেতে পারে।’
এদিকে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি দল গত বৃহস্পতিবার গাজা শহরে খাদ্য সহায়তার অপেক্ষায় থাকা অনেক ফিলিস্তিনিকে গুলিতে আহত অবস্থায় দেখতে পান। তাদের ওপর ইসরাইলি বাহিনী এ হামলা চালায়। আল-আওদা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বলেছেন, হাসপাতালে আনা আহতদের ৮০ শতাংশই গুলিবিদ্ধ ছিল।
খাদ্য সহায়তাকালে চালানো ‘গণহত্যা’য় নিহত আরও তিন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এতে করে মোট মৃতের সংখ্যা ১১৫ জনে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৭৬০ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) কর্মকর্তা জর্জিওস পেট্রোপোলোস বলেছেন, তিনি গত বৃহস্পতিবার গাজা শহরে খাদ্য সহায়তাকালে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে মারাত্মক আহতদের দেখেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রতিবেদনে শেয়ার করে পেট্রোপোলোস বলেন, ‘বিচ রোড চেকপয়েন্টে মর্মান্তিক এ ঘটনার একদিন পরের ঘটনা এটি, যেখানে শত শত মানুষ নিহত ও আহত হয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেমনটি আমি আপনাদের বলেছি, এই হাসপাতালে গতকাল আহত হওয়া ২০০ জনেরও বেশি লোকের চিকিৎসা করা হচ্ছে। আমরা গুলিবিদ্ধ মানুষ দেখেছি। আমরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন ব্যক্তি এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের দেখেছি, যারা গতকাল আহত হয়েছেন।’
‘এই ঘটনা চলতে দেওয়া যাবে না। মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন এমন লোকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য গাজা জুড়ে আমাদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ পথ দরকার। আমাদের গাজায় প্রবেশের জন্য প্রতিটি পথ উন্মুক্ত থাকা দরকার। এই লোকদের কেবল খাবার ও পানি নয়, হাসপাতালের সরঞ্জামও দরকার।’
এদিকে আগামী রমজানের মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মুসলমানদের পবিত্র মাসে একটি চুক্তি আশা করেছিলেন, যা মার্চ ১০ বা ১১ থেকে শুরু হবে— হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন এই আশার কথা বলেন।
বাইডেনকে উদ্ধৃত করে এএফপি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ‘আমরা এখনো এটিতে কঠোর পরিশ্রম করছি। আমরা এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। তাই আমি আশা করছি।’
এর আগে, সপ্তাহের শুরুতে জো বাইডেন বলেছিলেন, সোমবারের মধ্যে হামাস ও ইসরাইল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করছি।
গাজায় চলমান ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজার ২২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৭১ হাজার ৩৭৭ জন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা আশ্চর্যজনকভাবে ইসরাইলে হামলা চালায়। এতে করে অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়। এছাড়া ২৫৩ জনকে জিম্মি করে। এরপরই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। তবে এই হামলায় নিরীহ ফিলিস্তিনিরাই নিহত হচ্ছেন।
সারাবাংলা/এনএস