‘এটি কোনো নির্বাচন নয়, ক্যু করে ক্ষমতা নিয়েছে’
২ মার্চ ২০২৪ ২০:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গ্রেফতার-কারাবাস মিলিয়ে চারমাস পর চট্টগ্রামে ফিরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্যু করে আবারও ক্ষমতা নিয়েছে।
শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে বলছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে। আরে ক্ষমতা! ক্ষমতা তো অনেকভাবে নেওয়া যায়। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সামরিক বাহিনী ক্যু করে ক্ষমতা নিয়ে নেয়। আওয়ামী লীগ সেই ক্যু করেছে। ক্যু করে ক্ষমতা নিয়েছে। জনগণের তো এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ক্ষমতা জোর করে দখল করা আর ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে বিশাল ব্যবধান আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ গণভোটে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। এটি একটা সফলতা।’
বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন ১৫ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের জনগণ, দেশের জাতীয়তাবাদের পক্ষের শক্তি দেশপ্রেমিক নাগরিকগণ- সবার অংশগ্রহণে এক বিশাল আন্দোলনের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশে। সূচনা হয়েছে, শেষ হয়নি। এ আন্দোলন অব্যহত আছে।’
‘এ আন্দোলন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট, জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া সন্ত্রাসী এ রেজিমের বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং কিছু সুবিধাবাদী লোক যারা জনগণের সকল অধিকার ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ আন্দোলন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। এটা কোনো দলের বা ব্যক্তির আন্দোলন নয়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাব।’
গুটিকয়েক ভিক্ষুক রাজনীতিবিদ ছাড়া সবাই বিএনপির আন্দোলনে সাড়া দিয়েছে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘বোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার ও গুম-খুনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার আবার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের দাবি ছিল, এ ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনে যাবে না। ভালো খবর হচ্ছে, সে আহ্বান বিএনপিসহ বাংলাদেশের সমস্ত রাজনীতিবিদ সাড়া দিয়েছে, শুধু গুটিকয়েক ভিক্ষুক রাজনীতিবিদ ছাড়া। প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের পেশাজীবী ও সাংবাদিক ভাইয়েরাও একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।’
‘আমরা বলেছিলাম, তথাকথিত নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ অংশগ্রহণ করবে না। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এটা কোনো নির্বাচন রে ভাই? নির্বাচনে তো দুই পক্ষ থাকবে। যেখানে দুই পক্ষ থাকবে না, সেটাকে আপনি কি নির্বাচন বলবেন? বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শব্দ হিসেবে আগে যোগ হয়েছিল গায়েবি মামলা। নির্বাচনের পর যোগ হয়েছে ডামি প্রার্থী। ডামি ভোটার আর ডামি নির্বাচন এসব শব্দও যোগ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যায়নি। যারা গেছে, তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভয় দেখিয়েছে যাওয়ার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা ছিনিয়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। সুবিধাবঞ্চিতদের কাছ থেকে সরকারি কার্ড পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যায়নি। অর্থাৎ এ ভোট বাংলাদেশের মানুষ এত চাপের মধ্যে, এত গুম, খুনের মধ্যে সে রেজিমকে প্রত্যাখান করেছে। এটিই হচ্ছে আন্দোলনের সুফল।’
আন্দোলনে বিএনপির জয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখানের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের জয় হয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে, বিএনপির জয় হয়েছে। যারা এ আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে জীবন দিয়েছে, জেলে গিয়েছে, খুন ও গুম হয়েছে তাদের জয় হয়েছে। ‘আমাদেরকে জেলে নিয়ে তারা মনে করেছিল, বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেবে। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। আমি তো মনে করি আরও জোরদার হয়েছে। যারা জেলে আছে, তারা এক কাপড়ে আছে। এত কষ্টের মধ্যেও তাদের কারও মনোবল ভাঙ্গেনি। তাদের মনোবল শক্ত আছে। এটাই বিজয়।’
‘বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেক শক্তিশালী। নির্বাচনের পর আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনোবল আগে থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটাই রাজনীতি, রাজনীতির জয়। এটাই বিএনপির সফলতা। বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। কর্মীরা কর্মসূচির অপেক্ষায় আছে।’
রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করে নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার আহবান জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সামনে রমজান মাস আসছে। আমরা রোজা রাখবো, নামাজ পড়বো। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির সব কর্মসূচিকে সফলভাবে পালন করতে হবে। এতে সবাই যেমন চাঙ্গা থাকবে, তেমনি জনগণের কাছে যেতে পারব। ইফতার পার্টি না করে ওই টাকা দিয়ে জনগণের কাছে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করব। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির রাজনীতির শক্তি। মানুষের কাছে যেতে হবে। সবাইকে বিএনপির রাজনীতি করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ম্যা মা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার এবং দক্ষিণ জেলার সিনিয়র সহ সভাপতি এনামুল হক এনাম।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি সম্প্রীতি সমাবেশে যোগ দিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটে এবং এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
সংঘাতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২ নভেম্বর আমীর খসরুকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হরতাল পালন করে বিএনপি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি সর্বশেষ মামলায় জামিন পান। টানা সাড়ে তিন মাস কারাবাসের পর ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান।
সারাবাংলা/আইসি/একে