ইবির মেগা প্রকল্পের বিলে গোঁজামিল, তদন্তে ধীরগতি
৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫৬
কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেগা প্রকল্পের কাজের ১০ কোটি টাকার বিলের হিসাবে ‘গোঁজামিলে’র অভিযোগ ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। আড়াই মাস পেরিয়েও কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এ পর্যন্ত তারা মোট তিনদিন বসেছে। তদন্তে এই ধীরগতির ফলে অভিযোগ ওঠা ভবনগুলোর কাজের পরবর্তী বিল আটকে আছে। যার ফলে সেইসব কাজ বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দফতরে একটি ‘উড়োচিঠি’ পাঠনো হয়। চিঠিসূত্রে, মেগাপ্রকল্পের আওতাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম বিলে মোট ৬ কোটির বেশি টাকার ভুয়া বিল করা হয়েছে। যার মধ্যে ঠিকাদারকে ছয় কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছাত্রহল-১, দুইটি ছাত্রীহল, রবীন্দ্র নজরুল কলাভবনে মোট ৪ কোটি টাকা অগ্রিম ও অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়েছে। এসব বিলের হিসাব ও নথি উড়োচিঠিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সেই চিঠিতে আর্থিক সুবিধাভোগী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম উঠে এসেছে।
এদিকে উড়োচিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ ডিসেম্বর ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে একমাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও আড়াই মাসেও কমিটি এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেননি।
কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন ইবির সিন্ডিকেট সদস্য ও কমিটি গঠনকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ রয়েছেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘তদন্ত চলছে। প্রশাসনের কাছে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি।’
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত তিনদিন বসেছে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত ঠিকাদাররাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই ‘গোঁজামিল’র বিষয়টি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। হিসাবে যোগ করতে ভুল হয়েছে এবং কিছু বিষয় বাড়িয়ে লেখা হয়েছে বলেও জানান তারা। ছাত্রহল-১ এ আলমারিতে কাঠের পরিবর্তে লোহা ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত অনেককেই এখনও ডাকা হয়নি।
প্রকৌশল দফতর জানায়, তদন্তে ধীরগতির ফলে বিল আটকে থাকায় অভিযোগ ওঠা ভবনগুলোর কাজ বন্ধের উপক্রম। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এদিকে কাজের দিক দিয়ে সবচেয়ে নাজেহাল ছাত্রীহল দুটো। যার এখনও প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের দায়িত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক রুহুল আমিন বলেন, ‘কিছু ড্রয়িংয়ে সমস্যা আছে। আর অডিটের লোক নাকি আসবে সে জন্য আমাদের বিল আটকে দিয়েছে। এজন্য আমাদের কাজ বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যেন দ্রুত বিল ছাড়ার জন্য প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছি কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।’
ইবির প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য প্রশাসনের কাছে নোট দিয়েছি।’
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত বিল ছাড়া হবে না। অনিয়ম পাওয়া গেলে সেটি আগে সুরাহা করা হবে তারপর বিল ছাড়া হবে।’
এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে তিনি জানান।
সারাবাংলা/একে
ইবি ইবি উপাচার্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেগা প্রকল্প