Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের ফুটপাত দখলের চেষ্টা, আবারও উচ্ছেদ করল চসিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ মার্চ ২০২৪ ১৯:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে আবারও উচ্ছেদ অভিযান করেছে সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফুটপাত ও সড়ক থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের মধ্যে কেউ কেউ আবারও কাঠের স্থাপনা বসিয়ে দখলের চেষ্টা করছিলেন। এছাড়া সংলগ্ন দোকানিরাও অবৈধভাবে তাদের মালামাল ফুটপাতে রাখতে শুরু করেছিলেন। এ অবস্থায় আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

রোববার (৩ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে নিউমার্কেট মোড়ের আশপাশের এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলে। এতে নেতৃত্ব দেন চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা।

নগরীর রাইফেল ক্লাব, আমতল, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকমুণ্ডি লেইন হয়ে নিউমার্কেট মোড়, এর সেখান থেকে স্টেশন রোড, ফলমণ্ডি এবং এর বিপরীতে জিপিও, দোস্ত বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় বেশকিছু কাঠের চৌকিসহ অস্থায়ী স্থাপনা জব্দ করা হয়। পাশাপাশি দোকানের মালামাল রেখে ফুটপাত দখলের চেষ্টার দায়ে পাঁচটি দোকান থেকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এর আগে এখানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করেছিলাম। কিন্তু উচ্ছেদ করা অনেকে আবার বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ফুটপাতে বসে যাবার চেষ্টা করছিলেন। অনেকে ফুটপাতে তাদের দোকান অস্থায়ীভাবে সম্প্রসারণ করে মালামাল রাখতে শুরু করেন। এজন্য আমাদের আবার অভিযান চালাতে হয়েছে। অস্থায়ী স্থাপনাগুলো জব্দ করা হয়েছে। ৫টি দোকানকে ১১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছি।’

সড়ক ও ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের লক্ষ্য হচ্ছে, ফুটপাত-সড়ক আমরা দখল হতে দেব না। পুরো শহরের সব ফুটপাত-সড়ক আমাদের কার্যক্রমের আওতায় আসব। আমরা বারবার বলছি যে, ফুটপাত-সড়ক দখল করা যাবে না। আজও (রোববার) অভিযান শুরুর আগে মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলেছি। কিন্তু এরপরও যারা সরে যায়নি, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর হতে হয়েছে। ফুটপাতে কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরির কোনো সুযোগ নেই।’

চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমবার উচ্ছেদের সময়ই আমরা নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা বলেছিলাম। মনিটরিংয়ের ভিত্তিতেই আজ (রোববার) অভিযান চালানো হয়েছে। এখানে কেউ কেউ চেয়ার-টেবিল বসিয়ে আবার দখলে নেয়ার চেষ্টা করছিল। কিছু কিছু অংশ আবার দখল হয়ে গিয়েছিল। দোকান সম্প্রসারণের চেষ্টায় ছিলেন কেউ কেউ। সেগুলো আমরা উচ্ছেদ করেছি। আমাদের বার্তাটা হচ্ছে, ফুটপাত দিয়ে জনগণ হাঁটবে আর রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলবে। ফুটপাতে-রাস্তায় ব্যবসা হবে না, ব্যবসা হবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।’

উচ্ছেদ হওয়া দশ হাজার হকারের জন্য ‘হলিডে মার্কেট’ চালুর চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়র ইতোমধ্যে দু-তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। রেলওয়ের জিএম স্যারের সাথে কথা বলেছেন। শহরের বিভিন্নপ্রান্তে আমরা মাঠ চাচ্ছি। মাঠ যদি পাই, আমরা হলিডে মার্কেট চালু করে দেব। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে সেই মাঠে হকাররা বসে বেচাকেনা করবেন। তাদের জন্য বিদ্যুৎসহ আনুষাঙ্গিক যা যা প্রয়োজন, সব সিটি করপোরেশন দেবে। তবুও ফুটপাত-সড়ক দখল করা যাবে না।’

চসিকের এ উদ্যোগকে নগরবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে উল্লেখ করে আবুল হাশেম বলেন, ‘কেউ কেউ যা-ই বলুক, মানুষ কিন্তু মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যানার টেনেছে, পুলিশ কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা ফুটপাতে নিরাপদে হাঁটার দাবি জানিয়ে রাস্তায় নেমেছে। মানুষের সুবিধার জন্য যা যা করা দরকার, সেটা আমরা করব।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।

উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকাররা বিক্ষোভ করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পরদিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরপরও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নিতে শুরু করলে ১২ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এসময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় সিটি করপোরেশনের যানবাহন। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় হকারদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে।

এ অবস্থায় উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুনর্বাসনের দাবি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। হকাররাও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

বুধবার হাজারখানেক শ্রমিক মিছিল নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলেও মেয়র তাদের দেখা দেননি। স্মারকলিপিতে হকাররা রমজানে তাদের ফুটপাতে ব্যবসা করতে দেওয়ার দাবি জানান।

তবে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি চসিকের নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সভায় সড়ক-ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হকারদের আর বসতে না দেওয়ার বিষয়ে অনড় থাকার কথা ঘোষণা করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। কোনো চাপে নত না হয়ে আরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনারও ঘোষণা দেন তিনি।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

উচ্ছেদ চসিক টপ নিউজ ফুটপাত দখল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর