এক যুগ পর রাসায়নিক গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে ডিএসসিসি
৪ মার্চ ২০২৪ ১১:০২
ঢাকা: একটি প্রতিষ্ঠানের কেমিকেল গোডাউন তথা রাসায়নিক গুদামকে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবায়ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মাধ্যমে দীর্ঘ এক যুগ পর কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হলো।
পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর রাসায়নিক গুদামগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করেছিল সংস্থাটি। এরপর চুড়িহাট্টায় আগুন লাগলে শিল্প মন্ত্রণালয় শ্যামপুরে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। ওই প্রকল্পের অধীনেই শ্যামপুরে স্থানান্তর হওয়া রয়েল টন লেকার কোটিং পেয়েছে ডিএসসিসির ট্রেড লাইসেন্স।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রয়েল টন লেকার কোটিংকে ট্রেড লাইসেন্স দেয় ডিএসসিসি। রোববার (৩ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর শ্যামপুরে শিল্প মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পে স্থানান্তরিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মেসার্স রয়েল টন লেকার কোটিং নামক রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য অনুমতি নবায়ন করা হয়েছে। শ্যামপুরে স্থানান্তরিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে তাদের বাণিজ্য অনুমতি নবায়ন করে দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, শ্যামপুরে স্থানান্তরিত হওয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্য সব রাসায়নিক গুদাম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও সেখানে স্থানান্তরিত হবে। নিরাপদ হবে আমাদের পুরাতন ঢাকার সামগ্রিক পরিবেশ।
শ্যামপুরে না গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা বলেন, শ্যামপুরে অস্থায়ীভিত্তিতে যে রাসায়নিক গুদামগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। খোলামেলা পরিবেশ হওয়ার সেখানে ঝুঁকির মাত্রা অনেক কম। পাশাপাশি এসব রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জায়গার ওপর যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে আমরা জেনেছি। জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এসব রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠান যদি সেখানে স্থানান্তরিত না হয়, তাহলে আমরা সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব।
এর আগে গত বছরের ৪ জুন শ্যামপুরে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্প চালু করা হয়। ওই প্রকল্প উদ্বোধনের অণুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এসব বিপজ্জনক রাসায়নিক সামগ্রী পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরের মাধ্যমে ঢাকাকে আমরা একটি বাসযোগ্য ও দুর্যোগ সহনশীল নগরীতে পরিণত করতে পারব।
নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৩ সাল থেকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠানকে এবং চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর ২০১৯ সাল থেকে রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিস্ফোরকজাতীয় রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, এ ধরনের প্লাস্টিক কারখানা ও প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে।
এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনায় ডিএসসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং বিস্ফোরক পরিদফতরসহ সরকারের আরও বিশেষ তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি দল গঠন করে পুরান ঢাকায় (অঞ্চল ৩, ৪ ও ৫) অবস্থিত বিস্ফোরকজাতীয় প্লাস্টিক ও রাসায়নিক ব্যবসা পরিচালনাকারী গুদাম ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হয়। ২০২১ সালে সে তালিকা পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, ওই তালিকায় পুরান ঢাকায় অবস্থিত মোট এক হাজার ৯২৪টি রাসায়নিক গুদামের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করা হয়। তালিকায় রাসায়নিকের ধরন ও ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ গুদামের সংখ্যা এবং এসব গুদামে রাখা রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর নামও উল্লেখ করা হয়।
সারাবাংলা/টিআর
ট্রেড লাইসেন্স ডিএসসিসি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রয়েল টন লেকার কোটিং রাসায়নিক গুদাম