সংকটকালে আশার আলো দেখাচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল
৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৬
ঠাকুরগাঁও: ২৫০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা ও শতকোটি টাকা লোকসান নিয়ে দীর্ঘদিন চালু ছিল ঠাকুরগাঁও চিনিকল। ৬৭ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি, অনুন্নত আখের জাত, পুরাতন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যায় অবহেলাসহ নানা সংকট সত্ত্বেও চলতি মৌসুমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে চিনিকলটি। এমন সাফল্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে প্রায় ধ্বংস মিলটির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট কৃষকদের।
এই মৌসুমে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের উৎপাদন শুরু হয় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর এবং মিল বন্ধ হয় চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ মিলটি সর্বমোট ৫৪ দিন চালু ছিল। এ সময়ের মধ্যে ছোটখাটো দু’একটা ত্রুটির কারণে দু’এক ঘণ্টা মিল বন্ধ থাকলেও বড় কোনো শাটডাউনে যায়নি। এটিকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন মিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
এবার ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের টার্গেট নিয়ে মিল চালু হলেও ৭৪ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। এতে চিনি উৎপন্ন হয়েছে ৪ হাজার ২১ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের হার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যদিও আহরণ হারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
চিনি আহরণের এ নিম্ন হারের বিষয়ে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কবির বলেন, ‘নিম্ন হারের প্রধান কারণ হলো ৬৭ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি। বিভিন্ন দেশে যেখানে সর্বোচ্চ ২৫ বছর একটি মিলের যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব হয়ে থাকে। সেখানে আমাদের এ মিল ৬৭ বছর পরেও চিনি উৎপাদন করে যাচ্ছে। এছাড়াও উন্নত আখের জাত আমরা এখনো কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। মাঠ পর্যায়ে অন্য ফসলের চেয়ে আখের চাষে কৃষকেরও কিছু অবহেলা আছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে (পঞ্চগড় ও সেতাবগঞ্জসহ) মাত্র ৪ হাজার ৬১০ একরে আখ চাষ হচ্ছে। একর প্রতি আখের ফলন বাড়াতে হবে। এই ফসল চাষে অন্য ফসলের মতো যত্ন বাড়াতে হবে। আগামী ২৪-২৫ মৌসুম থেকে আখের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে যেখানে প্রতি কুইন্টাল আখ মিলগেটে ৫৫০ টাকা এবং বাইরে ৫০০ টাকা। ২০২৪-২৫ সালে বাড়িয়ে করা হয়েছে মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল ৬০০ টাকা এবং বাইরে ৫৮৭টাকা। এতে করে কৃষকরা আরও বেশি করে আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে করি।’
এ কারণে আগামী আখ মাড়াই মৌসুমে ৯০ হাজার মেট্রেক টন আখ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান। এ লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কৃষককে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করাই এখন প্রধান কাজ বলে মনে করেন তিনি। ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এনএস