নর্থ সাউথের ভিসির বিরুদ্ধে ফের তদন্ত শুরু দুদকের
৫ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৪
ঢাকা: গাড়ি ও জমি কেনার সময় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক কর্মকর্তা আনোয়ারুল হককে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গেল বছরের জুলাই মাসে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে সংস্থাটি। সেসব অভিযোগ থেকে বর্তমান ভিসি আতিকুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। তবে সংক্ষুদ্ধ একটি পক্ষ পুনরায় তদন্ত চেয়ে আবেদন করলে গুরুত্ব বিবেচনায় পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
এদিকে, এসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুনরায় উপচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. আতিকুল ইসলাম। রোববার (৩ মার্চ) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্তব্য জানতে একাধিকবার উপাচার্যকে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেনি। এ ছাড়া মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি।
পুনরায় তদন্ত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আতিকুল ইসলাম বর্তমানে ভিসি থাকলেও একই সঙ্গে তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে ভিসি কোনভাবেই ট্রাস্টি বোর্ডে থাকতে পারেন না। ফলে এটা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫ (৭) ধারা অনুযায়ী বেআইনি। আইনে আছে ট্রাস্টিরা কোন সুবিধা নিতে পারবেন না। কিন্তু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বেতন নেন। চ্যান্সেলরের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি আবার ট্রাস্টিও। তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সকল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন।
এর আগে, যে সকল দুর্নীতির অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ডের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছিল সে সময় ভিসিও সম্পৃক্ত ছিলেন এবং সকল ট্রাস্টি মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের সময় উপস্থিত থেকে সম্মতি দিয়েছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ১২টি গাড়ি কেনার সময় যে অর্থ জালিয়াতি হয়েছে, সেখানে তিনিও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া ২০২২ সালে ট্রাস্টি বোর্ড সভার সম্মানী কমিয়ে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও বোর্ড সদস্যরা আগের মত ৫০ হাজার টাকা সম্মানী নেন। আগে নর্থ সাউথের একজন ট্রাস্টির সুপারিশে পাঁচজন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ ছিল এবং একজন ট্রাস্টি তিনজন শিক্ষার্থীকে ফ্রি পড়াতে পারতেন। ২০২২ সালে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড করার পরে সদস্যদের এ সুবিধাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে বেশিরভাগ সদস্য একমত হলেও পরবর্তী সময়ে আবারও শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষার্থীকে ফ্রি পড়ানোর নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি কেনা ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ির ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নেওয়ার আড়ালে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নথি তলব করে দুদক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে যাবতীয় অনুলিপি চাওয়া হয়। সর্বশেষ এবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুদক।
সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ