৬ মার্চ ১৯৭১: ‘সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙে ৩৪১ কয়েদির পলায়ন
৬ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৮ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:১৫
ঢাকা: ৬ মার্চ ১৯৭১। এদিন সকাল ১১টার দিকে সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙ্গে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন কয়েদি নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।
বাংলাদেশে কার্যত ইয়াহিয়া খানের শাসন অকার্যকর হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানে কায়েম হয় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন। তাঁর ডাকে সারাদেশ সভা-সমাবেশ-মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে। ঢাকায় ৬ষ্ঠ দিনের মতো হরতাল পালনকালে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আসে। শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেওয়া হয়নি, সেসব অফিস খোলা রাখা হয়। লোকজন গিয়ে তাদের বেতন নিয়ে আসে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুপুরে এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি ততদিন পর্যন্ত আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের সংহতির নিশ্চয়তা বিধান করব। রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আমি ১০ মার্চ রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করছি।’
পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা ইয়াহিয়া খানের ঘোষণাকে স্বাগত জানান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন।
লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দোষারোপ করা দুঃখজনক।’
প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের পরেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির এক যুক্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই গভীর রাতে বৈঠক মুলতবি করা হয়।
ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান অনুষ্ঠেয় সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেশের সব বেতারে সরাসরি রিলে করার দাবি জানান।
রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মোটামুটি একটি কাঠামো স্থির করতে চাই।’
এদিকে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুরোধ জানিয়ে ইয়াহিয়া খান বলেন, ‘আমরা ঢাকায় এসে আপনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমি আশ্বাস দিতে পারি যে, জনগণের কাছে আপনার প্রদত্ত ওয়াদা পূরণ হতে পারে।’
সারাবাংলা/এজেড/এমও