বিচার হলে এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না: মেয়র তাপস
৬ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৮
ঢাকা: আইনের আওতায় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্তি ও সংস্থার দায়ভার নির্ধারণ করে বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডের বিচার শেষ করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (৬ মার্চ) সকালে সাদেক হোসেন খোকা সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের (কমিউনিটি সেন্টার) ৪র্থ তলায় স্থাপিত অত্যাধুনিক ‘সাউথ পয়েন্ট নগর ব্যায়ামাগার’ উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ মন্তব্য করেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘আমরা দেখি, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একজন আরেক জনের বিরুদ্ধে, এক সংস্থা আরেক সংস্থার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে দায় চাপানোর চেষ্টা করে। তদন্ত হয়, দায়সারা তদন্ত। আইনের আওতায় সুনির্দিষ্ট দায়ভার নির্ধারণের তদন্ত কিন্তু আমরা সচরাচর দেখি না। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই দুর্ঘটনার দায়ভার নিশ্চিত করার এবং আদালতের মাধ্যমে এর বিচার শেষ করার। একটি নজির যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলেই সবার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে, প্রয়োগ হবে। এতে করে কারো মুখের কথায় ঢালাওভাবে অন্যের ওপর দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা যেমনি রোধ হবে তেমনি এ ধরনের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো এবং এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না।’
আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দায়ভার নির্ধারণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া কিভাবে নির্দিষ্ট করা আছে তা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘আমরা যদি দেখি সেখানকার সিঁড়িটা পর্যাপ্ত প্রশস্ত ছিলো না। একটি ৯/১০ তলা ভবন নির্মাণে কতগুলো সিঁড়ি থাকবে এবং সিঁড়ির প্রশস্ততা কত হবে তা ইমারত বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করা আছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই বিধিমালা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দায়ভার কার? প্রথম দায়ভার হলো একজন স্থপতির। কারণ, সারাবিশ্বে আইনের আওতায় বলা আছে- যিনি পেশার সেবা দেবেন তাকে যথাযথভাবে আইন, নীতিমালাগুলো পরিপালন করতে হবে। তাহলে বিধিমালা অনুযায়ী সিঁড়িসহ কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে, কতটুকু জায়গা ছাড়তে হবে, জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে বহির্গমন হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো নকশা প্রণয়নকারী স্থপতি নির্ধারণ করবেন। দ্বিতীয় দায়ভার হলো সে সংস্থার, যে সংস্থা এই নকশাটা অনুমোদন করেছে। নকশা অনুমোদনকালে আইন, বিধিমালা পরিপালন করা হয়েছে নাকি? যদি সেখানে কোনো ব্যতয় বা অবহেলা বা কোনো গাফিলতি থাকে, তাহলে সেই কর্তৃপক্ষকে দায়ভার নিতে হবে। তৃতীয়ত, একটি ভবন নির্মাণে অনেক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র বা অনুমতি নিতে হয়। এ ধরনের ছাড়পত্র প্রদানে যদি কোনো সংস্থার অবহেলা বা গাফিলতি থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের দায়ভার নির্ণয় করা হবে। এছাড়াও আইনের ভাষায় অকুপায়ার্স লায়াবিলিটির আলোকে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক, ভবন ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা রেস্তোরাঁ মালিকদেরও দায়ভার রয়েছে। সুতরাং, আইনের আওতায় দায়ভার নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব বিষয়ই তদন্তে আসা উচিৎ।’
সাউথ পয়েন্ট নগর ব্যায়ামাগারে আধুনিক সব সুবিধা সন্নিবেশ করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই ব্যামাগার পরিচালিত হবে, যাতে করে স্বল্পমূল্যে নগরবাসী এখানে শরীরচর্চা করতে পারে। এখানে স্টিম বাথ, সওনা বাথসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা রয়েছে। ১০ হাজার বর্গফুট জায়গার মধ্যে পুরুষ এবং নারীদের জন্য আলাদাভাবে ব্যায়াম করার সুযোগও এখানে রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সারোয়ার হাসান আলো, ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সুলতান মিয়া, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মিনু রহমান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামানসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস শ্যামপুর বরইতলা থেকে আলমবাগ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন এবং ৪১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলোর সৌজন্যে এলাকার ২ হাজার বাসিন্দার মাঝে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে ভোজ্যপণ্য বিতরণে অংশ নেন।
বিনামূল্যে বিতরণ করা পণ্য সামগ্রীর মধ্যে চাল, মশুর ডাল, সয়াবিন তেল, চিনি, লবণ, সেমাই, খেজুর, আলু ইত্যাদি রয়েছে।
সারাবাংলা/আরএফ/এমও