Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোস্টারে ঢেকে যাচ্ছে মেট্রোরেলের পিলার, উদাসীন কর্তৃপক্ষ

ঝর্না রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৪

ঢাকা: রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মীয় প্রচার, সিনেমার প্রচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেরও ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে স্বপ্নের মেট্রোরেলের প্রতিটি পিলার। রাজধানীর মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত অধিকাংশ পিলারের গায়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পোস্টার। পোস্টার লাগানোয় পিলারগুলো দিন দিন হতশ্রী রূপ নিচ্ছে। মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ আইন থাকলেও প্রশাসনের সামনেই ‌এসব চলছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর পল্টন মোড়ের অংশে মেট্রোরেলের পিলারে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশের পোস্টার লাগিয়েছে ‘ইসলামি সমাজ’। একাত্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলির পোস্টার, নির্বাচনি পোস্টার, পরের পিলার পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই মাঝ বরাবর আটাবের নির্বাচনি বিলবোর্ড।

পরের ৬০০ নম্বর পিলারের গায়ে কুতুববাগ ওরস শরীফ, ইসলামি সমাজের সম্মেলন, মাওলানা মাদানির প্রচার, জামিয়া কাশিফুল ঢাকা, বিশ্ব জাকের ইসতেমা, আদ দাওরাহ বাংলাদেশ, মাইন্ড সলিউশন ঘটানোও হচ্ছে মেট্রোরেলের পিলারে।

আরও আছে গাউসুল আজম কনফারেন্স,ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পোস্টার, জাতীয় বিমা দিবস, রেটিনার বিজ্ঞাপন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দের পোস্টার। জাতীয় পার্টির মহাসম্মেলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আলোচনা সভা, জাতীয় মানবসম্পদ লীগের পোস্টার, খেলাফত মজলিসের সম্মেলন, অষ্টম জুরাইন বইমেলা, জাতীয় বিমা দিবস, বিশ্বজাকের ইসতেমা, ওরস শরীফ, এসবই পোস্টার।

মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত পিলারগুলোতে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচির পোস্টার।

‘ইসলামী সমাজ’র মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল আবু জাফর মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কর্মীদের হাতে পোস্টার দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে লাগাতে বলেছি। তারা যে কোথায় লাগিয়েছে সেটা মনিটর করা হয়নি।’

মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ বিষয়টি তিনি জানতেন না উল্লেখ করে বলেন, ‘সংগঠনের অন্য নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’ মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

পিলারের গায়ে প্রচার-প্রচারণার পোস্টারের পাশাপাশি লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে মেট্রোরেলের পিলারে লাগানো হয়েছে বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন। আরও আছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চলার বিজ্ঞাপন।

ড্রাইভার আবশ্যক, আইকন কোচিং সেন্টারে ভর্তি চলার বিজ্ঞাপন। এ প্রসঙ্গে ‘আইকন’ কোচিং সেন্টারের ডিরেক্টর মো. কামারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোস্টার লাগানোর কাজ করে শ্রমিকেরা। আমরা পোস্টার দেই তারা পুরো ঢাকা শহরে লাগিয়ে দেয়। আমি জানতাম না মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগিয়েছে। আমি এটাও জানতাম না যে পিলারে পোস্টার লাগানো অপরাধ। আমাদের ভুল হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে বিষয়টি মাথায় থাকবে।’

প্রেসক্লাবের সামনের পিলারে জাতীয় পার্টির দশম সম্মেলনের পোস্টার লাগিয়েছে দলটির প্রচার উপকমিটি। আবার ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় জাতীয় পার্টি (জাপা) সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সাইফুদ্দীন আহমেদের (মিলন) সৌজন্য পোস্টার চোখে পড়ছে। এমন পোস্টার পল্টনের দিকের পিলারেও চোখে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাইফুদ্দীন মিলন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি গত দুই বছর ধরে কোনো পোস্টার রাজধানীর কোথাও লাগাই না। এটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। কেউ যদি সৌজন্যে লাগিয়ে থাকে তাহলে সেটা আমার জানা নেই। আমি জেনে বুঝে মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর মানুষ আমি নই।’

এদিকে এসব দেখাশোনার জন্য মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ‘এমআরটি পুলিশ’ রয়েছে। এছাড়া একটি বিভাগও রয়েছে ডিএমটিসিএল’র।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, পোস্টার লাগানো নিষেধ, তারপরেও লাগানো হচ্ছে। এজন্য এমআরটি পুলিশ রয়েছে। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে। পোস্টার তোলা এবং না লাগানোর বিষয়ে সচেতন করার কাজ চলমান। এরপরেও মানুষ না সচেতন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে জনসচেতনা তৈরিতে গত বছর সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো সিটি করপোরেশন।

সারাবাংলা/ জেআর/এমও

পোস্টার মেট্রোরেল মেট্রোরেলের পিলার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর