পাসপোর্ট জমার শর্তে ডেসটিনির রফিকুল আমিনের জামিন
৬ মার্চ ২০২৪ ২০:১৪
ঢাকা: এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের দায়ে ১২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনকে পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৬ মার্চ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব ও মো. মোহাদ্দেস-উল ইসলাম। দুদকের পক্ষে শুনানি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
পরে আইনজীবী মোসাদ্দেস-উল ইসলাম বলেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা খাটা হয়ে যাওযায় আদালত রফিকুল আমীনকে পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে এক বছরের জন্য জামিন দিয়েছেন। তবে বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে থাকায় আপাতত তিনি কারামুক্তি পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রফিকুল আমীনের আপিল হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রায় চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় আলাদা দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার আসামিরা ওই বছরের ১১ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে রফিকুল আমীন কারাগারে আছেন।
এরপর ২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকের এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি তাকে ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়। আর ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের’ কথা বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে এই অপরাধের সর্বনিম্ন সাজায় দণ্ডিত করে।
এ ছাড়া হারুনের অবরুদ্ধ সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবে অবমুক্ত (রিলিজ) করার নির্দেশ দেন আদালত।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায়ে ৪৬ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। মামলার ৪৬ আসামির মধ্যে ৩৯ জন পলাতক আছেন।
এরপর নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন। পাশাপাশি জামিন আবেদন করা হয়।
পরে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে রফিকুল আমীনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে ২০০ কোটি টাকা জরিমানার রায় স্থগিত করেন আদালত।
চলতি বছরের শুরুতে রফিকুল আমীনের জামিন আবেদন শুনানির কার্য তালিকায় আসে। আজ শুনানি শেষে আদালত রফিকুল আমীনকে পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে এক বছরের জামিন দিয়েছেন।
একই মামলায় জামিনে আছেন সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল।
এদিকে ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের নামে করা মামলা এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি- প্ল্যান্টেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই টাকার মধ্যে এলসি (ঋণপত্র) হিসেবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা ও সরাসরি পাচার করা হয় ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার।
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট রফিকুলসহ অন্যদের নামে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।
এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ এক বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ