উৎসবমুখর পরিবেশে সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষ
৬ মার্চ ২০২৪ ২১:৩২
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচনে প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার (৬ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুরে একঘণ্টা বিরতি দিয়ে বেলা ৫টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। প্রথম দিনে ৩ হাজার ২৬১ জন আইনজীবী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে শত শত আইনজীবী দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এদিন সংবিধান প্রণেতা প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ক্রাচে ভর দিয়ে ভোট দিতে আসেন। সকাল সাড়ে ১০টায় হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী ভোট দেওয়ার জন্য আইনজীবীদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি বছর শুরুতে ভোট দিই। এবারও শুরুতে ভোট দিতে এসেছি। আশা করি, এবার সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষে নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোট আজ শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৩ হাজার ২৬১ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমি নিজেও ভোট দিয়েছি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনের ভোট অনুষ্ঠিত হব।’
সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, দ্বিতীয় দিনেও সবার প্রত্যাশা মতো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।’
দুই দিনব্যাপী এই নির্বাচনে আগামীকাল বৃহস্পতিবারও ভোট নেওয়া হবে। এরপর ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ড. ইকবাল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ উৎসবমুখর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম দিনে ভোট পড়েছে ৩ হাজার ২৬১টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা সাত হাজার ৮৮৮ জন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আশা করছি আগামীকালও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।’
এদিন আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ থাকায় সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সকাল থেকে আইনজীবীদের আইডি কার্ড দেখে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তবে সকালে সাদা পোশাকে শতাধিক বহিরাগতকে ভোট কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। এরপর পুলিশের সহায়তায় সাদা পোশাকে অবস্থান নেওয়া বহিরাগতদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
এবার সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। ছয় সদস্যের কমিটিতে বাকি পাঁচ জন সদস্য।
অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন হলেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা বরাবরই প্যানেলভিত্তিক পরিচিতি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মনোনীত প্রার্থীরা ‘সাদা প্যানেল’র প্রার্থী হিসেবে হিসেবে পরিচিত। আর বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেল সমর্থিত প্রার্থীরা ‘নীল প্যানেল’র প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। মূলত এ দুটি প্যানেলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪টি পদে ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ দাফতরিক পদ সাতটি, বাকি সাতটি সদস্য পদ। সাদা-নীল দুই প্যানেলই বরাবরের মতো ১৪টি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। এ দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে দুজন, সম্পাদক পদে দুজন এবং কোষাধ্যক্ষ পদে একজন নির্বাচন করছেন। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩৩ জন।
গত বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে সাদা-নীল প্যানেলের প্রার্থী-সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল হয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতাহাতি-ভাংচুরের মধ্যে পুলিশি হামলার ঘটনাও ঘটে। পুলিশের হামলায় আইনজীবীদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বিটের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জন না করলেও নীল প্যানেলের প্রার্থীরা ভোট থেকে সরে দাঁড়ান। গত বছর ১৫-১৬ মার্চ ভোট হয়। দ্বিতীয় দিনের একপেশে ভোটের পরদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ ফল প্রকাশ করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি। নিরঙ্কুশ (১৪টি পদের সবগুলোতেই) জয় পায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই। আমরা প্রত্যাশা করছি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে।’
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-২৫ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল। তফসিলে ৬ ও ৭ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়।
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থীরা হলে- সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দু’জন সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে মনোনীত বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুজন সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল।
এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং এম কে রহমানের প্রার্থী হয়েছে। এ ছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়ার প্রার্থী হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম