Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জবির ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, ক্ষুব্ধ সদস্যরা

আবু সুফিয়ান সরকার শুভ, জবি করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩১

জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর ওপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দিনে দিনে বেড়েই চলছে। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষমতা। সংগঠনগুলোর ওপর কর্তৃত্ব দেখাতে যখন-তখন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে সংগঠনগুলর ব্যানার-ফেস্টুন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। নানা মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডে ক্ষুদ্ধ সংগঠনগুলোর সদস্যরা। প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংগঠনগুলোকে দমিয়ে রাখার অভিযোগও উঠেছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৯টি নিবন্ধকৃত সংগঠন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সেবামূলক ও মিডিয়া সংগঠনগুলো বছরব্যাপী নানান কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এবার সংগঠনগুলোর এসব স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এতে সংগঠনগুলোর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড যেমন কমে গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চাও দিনে দিনে তলানিতে এসে ঠেকেছে। দিনে দিনে অর্থ বরাদ্দ কমানো, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের ব্যানারে করা সহ অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুমতি দিতে গড়িমসির অভিযোগ করছে সংগঠনগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর অভিযোগ, পূর্বে বিভিন্ন দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। গত বছর থেকে সংগঠনগুলোকে সেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যানারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে প্রশাসন। এতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়ছে সংগঠনগুলো। নিয়মিত অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চাতেও ভাটা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব কিছুর পেছনে কাজ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপর খবরদারি বাড়াতে সংগঠনগুলোর বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দও কমিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাস্তবতায়ও ফুটে উঠেছে সেই চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ ছিল ১৯ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ কোটি ২৭ লক্ষ করা হলেও সংশোধন করে কমিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ১২ লক্ষ টাকা। করোনা পরবর্তী সময়ে সংগঠনগুলর সাংগঠনিক চর্চা বাড়ালেও ২০২১-২২ অর্থবছরেও বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ১২ লক্ষ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ আরো কমেছে বলে জানা গেছে। আর্থিক বরাদ্দ কমে যাওয়ায় সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডও কমে গেছে। এতে স্থবির হয়ে পড়ছে সাংগঠনিক চর্চাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ফটোগ্রাফিক সোসাইটির মডারেটর দ্বীন ইসলাম বলেন, অনেক আগে উপাচার্য হিসেবে মীজান স্যার থাকাকালীন ফটোগ্রাফিক সোসাইটির এক্সিবিশন হয়েছিল। পরে বাজেট স্বল্পতায় আর কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। বাজেট না পেলে তো প্রোগ্রাম আয়োজন করা যায়না।

এদিকে সংগঠনগুলোকে প্রশাসনের কর্তৃত্বে রাখতে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরানো হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনুমতির জন্য প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন দফতরে হয়রানির স্বীকার হতে হয় বলেও অভিযোগ করছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। এছাড়াও বছরের পর বছর ধরে দিবসভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান সংগঠনগুলো আয়োজন করে আসলেও তা কেড়ে নিয়ে প্রশাসন নিজেদের ব্যানারে করছে বলেও অভিযোগ। পূর্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন আবৃত্তি সংসদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করলেও তা এবার কেড়ে নিয়ে নিজেদের ব্যানারে করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে, বিভিন্ন সময়ে অবকাশ ভবনে ঝুলানো সংগঠনগুলোর ব্যানার-ফেস্টুন সংগঠংনগুলোকে অবগত না করেই ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে যেমন সংগঠনগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি সংগঠনগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে এবং মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে অবকাশ ভবনের অনেকগুলো সংগঠনের টানানো ব্যানার না জানিয়েই খুলে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত অফিস কক্ষের সামনে বিভিন্ন আয়োজনের ব্যানার ঝুলাতেও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সংগঠনগুলোকে। প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার কাজে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল হোসেন বলেন, ভিসি ম্যাম আমাদের এসব সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভুলে আমরা অবকাশ ভবনেরগুলোও খুলে ফেলেছি। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। আমি কাজের সময় সেখানে ছিলাম না। তাহলে এমন হতো না।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, সংগঠনগুলোর তাদের কার্যক্রমের ব্যানার গুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টানিয়ে রাখবে। প্রোগ্রাম শেষ হলে সেগুলো সরিয়ে নিলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বজায় থাকে। না সরালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে চিঠি দিয়ে বা অন্য মাধ্যমে অবহিত করতে পারে সরানোর জন্য। পরে তারা না সরালে হয়তো সরাতে পারে। সংগঠনগুলোকে জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন সরানো উচিৎ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি বাণী অর্চনার নষ্ট হয়ে যাওয়া ব্যানার-পোস্টারগুলো সরাতে বলেছিলাম। কিন্তু সে (সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন) অবকাশ ভবনের ব্যানারও সরিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে বলে শুনলাম। আমি তাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছি। তাকে বলেছি, তুমি এটা ঠিক করে দিবা। সে ঠিক করে দিবে বলেছে।’

সারাবাংলা/এনইউ

ক্রিয়াশীল সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর