Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২৪ ২৩:৩৩

সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি। ছবি: সিপিবি

ঢাকা: ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে দেশের বামপন্থি রাজনীতির প্রবীণ সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে দলের নেতারা বলেছেন, রাজনীতি এখন কেনাবেচা, ভাগ-বাটোয়ারা, আখের গোছানো ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এখানে নীতির প্রশ্নে আপসহীন থেকে শ্রমিক-কৃষক, মেহনতি মানুষের পার্টি সিপিবি মানুষ ও প্রকৃতির মুক্তির লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মর্যাদা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও লুটপাটতন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৬ মার্চ) সিপিবির ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সমাবেশে পার্টির নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের সামনে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। এ সময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, পরেশ কর, সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমানসহ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসহ প্রবীণ-নবীন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সিপিবি সবচেয়ে অপসহীন ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে যোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই শক্তি ও দৃঢ়তা অর্জন করেছে তার ৭৬ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, বেআইনি থাকার পরেও পাকিস্তানের দীর্ঘ শাসন ও শোষণবিরোধী লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ছিল কিংবদন্তিতুল্য। ওই সময় নানাভাবে কমিউনিস্টদের হত্যা করা হয়। ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যাসহ করা হয়, যা ছিল প্রথম জেলহত্যা। কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ে যুগ যুগে ষড়যন্ত্র হয়েছে, পার্টিকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। বরং তারাই ধ্বংস হয়েছে।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সিপিবির ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা বাংলাদেশে অনেক কিছুই দেখলাম। এখন রাজনীতি দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি। এরাই পালাক্রমে ক্ষমতা দখল করে আছে। এদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করে তুলতে হবে । কমিউনিস্ট পার্টিই একমাত্র জনগণের পক্ষের শক্তি এবং প্রকৃত বিরোধী দল, কারণ নীতির প্রশ্নে আমরাই তাদের বিরোধিতা করি এবং জনগণের পক্ষে কথা বলি।

বিজ্ঞাপন

সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি। ছবি: সিপিবি

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ক্ষমতায় গেলে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও সব মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, কাজ, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে কমিউনিস্ট পার্টি। এ পর্যন্ত যারা পালাক্রমে শাসন ক্ষমতায় ছিল এবং আছে, তারা মেহনতি মানুষকে অমর্যাদায় রেখেছে। সবার ভোটাধিকারের কথা থাকলেও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক ভোটে সবার সমান অধিকার থাকলেও যেসব মানুষের শ্রমে-ঘামে অর্থবিত্ত গড়ে উঠেছে, তারা আজ আধপেটা খেয়ে, নিজের সন্তানকে চিকিৎসা-শিক্ষা দিতে না পেরে দিন অতিবাহিত করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে নীতিহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির পতাকা তলে সমবেত হতে হবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে আজ এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে তরুণ প্রজন্ম দেশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে না। তথ্যই বলছে, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রাপ্ত তরুণ কাজ না করে অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তায় বিভোর তারা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এটি কাম্য হতে পারে না। কমিউনিস্ট বামপন্থিরা ক্ষমতায় গেলে মানুষের মর্যাদা, সম্পদের সুষম বণ্টন, সকলের শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ ও নতুন প্রজন্মের সামনে সবার উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তোলা দৃশ্যমান কাজ করবে।

গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিতরা কখনোই জনগণের স্বার্থে কাজ করবে না। তাদের জবাবদিহিতা থাকবে না। স্বচ্ছতা থাকবে না। তাই মেহনতী মানুষকে নিজেদের দাবির সঙ্গে সঙ্গে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শরিক হতে হবে।

সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য লাল পতাকা মিছিল পুরানো পল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, দিলকুশা, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব হয়ে পার্টি কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশের আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এ সময়ে জাতীয় সংগীত ও কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল পরিবেশন করা হয়। এর আগে গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

রুহিন হোসেন প্রিন্স শাহ আলম সিপিবি সিপিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর