৮ মার্চ ১৯৭১: সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু

ঢাকা: ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতে যুক্তরাজ্য ও তখনকার পশ্চিম জার্মানির ১৭৮ জন নাগরিক ঢাকা ত্যাগ করেন। ফলে বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে যায় যে, ‘‘বাঙালিকে আর দাবায়ে রাখা যাবে না।’’

এদিন সরকারি এক প্রেসনোটে বলা হয়, ‘আন্দোলনে ১৭২ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৩৫৮ জন। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।’

সামরিক জান্তার এ ডাহা মিথ্যাচারের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, সামরিক কর্তৃপক্ষের প্রেসনোটে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। ‘অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে’বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ। নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে, তা বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।’

ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতার আন্দোলন’ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি দিয়েছেন, আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতাকে আহ্বান করছি।’

রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বেতার থেকে সম্প্রচার করা হয়। প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও তা রিলে করা হয়।

রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষিত নির্দেশনার ব্যাখা দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নগদ জমা, বেতন ও মজুরি প্রদান, এক হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান এবং আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স ও নগদ লেনদেন করতে পারবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খোলা থাকবে। সার সরবরাহ ও পাওয়ার পাম্পের ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক খোলা থাকবে। পানি ও গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’তাদের নামের আগে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ অংশটি বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো সিনেমা হলগুলোতে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন বন্ধ রাখেন হল মালিকেরা। তারা সিনেমা কর না দেওয়ার নির্দেশও মেনে নেন। ব্রিটেন প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

১৯৭১ সালের ৮ মার্চ সম্পর্কে শহিদ জননী জাহানারা ইমাম তার ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর রেডিও স্টেশনের লনে কারা যেন বোমা ছুড়েছে। কাল রাতে রেডিও বন্ধ থাকার পর আজ সকাল থেকে আবার চালু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা প্রচারিত হলো।’

তথ্যসূত্র
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইট
‘একাত্তরের দিনগুলি’- জাহানারা ইমাম
‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি ১৯৭১-২০১১’- মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/এজেড/একে

১৯৭১ ৮ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রাম