Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এমএইচ৩৭০ নিখোঁজের এক দশক, ফের খোঁজ করতে চায় মার্কিন সংস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:১৬

১০ বছর আগে আজকের এই দিনে অ্যাভিয়েশন ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যজনক ঘটনার একটি ঘটেছিল। মাঝ আকাশে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় যাত্রীবাহী ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। এক দশক পেরিয়েছে, কিন্তু আজও বিমানটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।আজও কেউ জানে কী ঘটেছে বিমানটির সঙ্গে। বেসামরিক অ্যাভিয়েশন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্যের একটি হয়ে আছে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০।

নিখোঁজের তিন বছর পর বিমানটির আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এরও সাত বছর পর, অর্থাৎ এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস-ভিত্তিক সামুদ্রিক রোবটিক্স কোম্পানি ওশান ইনফিনিটি বিমান রহস্য সমাধানে অনুসন্ধান চালাতে চায়। এর আগেও এই সংস্থা এমএইচ৩৭০-এর অনুসন্ধান অভিযান চালিয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়।

এবার সংস্থাটি নিখোঁজ বিমানের সন্ধানের অনুমতি চেয়ে মালয়েশিয়া সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। মালয়েশিয়া বলেছে, তারা উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকলে প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে।

এমএইচ৩৭০ নিখোঁজের আগে যে সব তথ্য জানা যায়

২০১৪ সালের ৮ মার্চ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশে উড্ডয়ন করেছিল এমএইচ৩৭০। উড্ডয়নের ৩৯ মিনিট পর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রাডার সিস্টেমের ডিসপ্লে থেকে বিমানটি উধাও হয়ে যায়।

মালয়েশিয়ার আকাশসীমা ছেড়ে ভিয়েতনামের আকাশসীমায় প্রবেশ করার আগে মালয়েশিয়ার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে একটি রেডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের পাইলট। কিন্তু ভিয়েতনামে প্রবেশের জন্য বা প্রবেশের পর সেদেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে কোনো বার্তা পাঠাননি পাইলট।

মালয়েশিয়ার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে পাঠানো সর্বশেষ বার্তার দুই মিনিট পর বিমানটি থেকে স্বয়ংক্রিয় তথ্য পাঠানোর ব্যবস্থা ট্রান্সপন্ডার থেকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে তথ্য আসা বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিমানটি বেসামরিক রাডার সিস্টেমে পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়।

তবে সামরিক রাডার ও স্যাটেলাইট সিস্টেমে এর পরেও বিমানটির গতিপথ রেকর্ড হয়। এতে দেখা যায়, এমএইচ৩৭০ বিমানটি ভিয়েতনামের আকাশসীমায় প্রবেশ না করে মুখ ঘুরিয়ে আবার আন্দামান সাগর অভিমুখে উড়তে থাকে। এরও কয়েক ঘণ্টা পর বিমানটি সামরিক রাডার ও স্যাটেলাইট সিস্টেম থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। এর পর বিমান সম্পর্কে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটি ততক্ষণে জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।

নিখোঁজ উড়োজাহাজের সন্ধান পেতে বিস্তৃত সমুদ্রে তন্নতন্ন করা হয়। বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজে চলে যৌথ অনুসন্ধান অভিযান। মালয়েশিয়ার সাহায্যে হাত বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত বড় দেশ। আধুনিক সকল প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। তবে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও বিমানের ধ্বংসাবশেষের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১৭ দিন পর তৎকালীন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এক ঘোষণায় বলেন, স্যাটেলাইটের তথ্যের ভিত্তিতে তার সরকার এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, বিমানটি ভারত মহাসাগরের একটি প্রত্যন্ত কোণে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং কেউ বেঁচে নেই।

নিখোঁজ বিমানটিতে যাত্রী ছিলেন ২২৭ জন, ক্রু ছিলেন ১২ জন। যাত্রীদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন চীনের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী। তাদের একটি প্রদর্শনী থাকায় একসঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন।

এমএইচ৩৭০ নিখোঁজের পর কয়েক ডজন জাহাজ ও বিমান দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগর চষে বেড়ায়। কয়েকটি দেশ এক সঙ্গে মিলে যৌথ অভিযানও চালায়। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও চীন সাবমেরিন এবং বিমান দিয়ে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে একটি বিশাল আন্ডারওয়াটার সার্চ অপারেশন পরিচালনা করে।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে পশ্চিম ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রিইউনিয়নের উপকূলে বিমানের ডানার অংশ ফ্ল্যাপরনের পুড়া টুকরো পাওয়া যায়। গবেষণার পর ফ্ল্যাপেরনটি এমএইচ৩৭০ এর বলে নিশ্চিত করা হয়। ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ এর প্রথম কোনো অংশ শনাক্ত ছিল সেটি। বিমানটি বিধ্বস্তের শক্ত প্রমাণ হয়ে উঠে এই ফ্ল্যাপরনটি। পরে পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে আরও কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।

তবে বিমানের আর কোনো বিস্তারিত তথ্য বা বড় কোনো অংশ পাওয়া যায়নি। ফলে ২০১৭ সালে বিমান অনুসন্ধানের সব ধরনের আনুষ্ঠানিক অভিযান স্থগিত করা হয়।

সম্প্রতি টেক্সাসের ওশান ইনফিনিটি আবারও বিমানটির অনুসন্ধান অভিযানে আগ্রহী। এবার তাদের প্রস্তাব হলো বিমানটি খুঁজে না পেলে তাদের কোনো অর্থ দিতে হবে না। তবে মালয়েশিয়া সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বিমান অনুসন্ধানের অনুমতি তখনই দেওয়া হবে যদি এটি সম্ভাব্য কোথায় থাকতে পারে এই প্রশ্নের নতুন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সরবরাহ করা হয়।

মালয়েশিয়ার পরিবহন মন্ত্রী অ্যান্তোনি লক এ বিষয়ে বলেন, আমরা ইনফিনিটি ওশেনের প্রস্তাব সম্পর্কে উন্মুক্ত আছি। যদি নতুন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অনুসন্ধান চালানোর অনুমতি দেবে সরকার। আমরা সত্যিই আশাকরি, নতুন অনুসন্ধানে যেন বিমানটি পাওয়া যায় এবং যাত্রী ও ক্রুদের আত্মীয়রা সত্যটা জানেন।

একই ধরনের কথা বলেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেন, যদি প্রমাণ থাকে যে অনুসন্ধান পুনরায় চালু করার প্রয়োজনীয়তা আছে, তাহলে আমরা অবশ্যই পুনরায় শুরু কর‍ব। আমাদের যা করা দরকার তাই করতে হবে।

বিমান নিখোঁজের বিভিন্ন তত্ত্ব

বিমানটি নিখোঁজের একটি নির্দিষ্ট কারণ সমর্থন করার মতো কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন তত্ত্ব সামনে এসেছে এবং বেশিরভাগই তদন্ত করা হয়েছে। তবুও বিমানটিতে কী হয়েছিল সেই রহস্যের কোনো সুরহা হয়নি।

শুরু থেকে ব্যাপক প্রচারিত একটি তত্ত্ব হলো, ক্যাপ্টেন বা অন্য ক্রু সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে গণ-আত্মহত্যার আয়োজন করেছিলেন। এই তত্ত্বের পক্ষে অবশ্য কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কর্তৃপক্ষ ক্রুদের আর্থিক রেকর্ড পর্যালোচনা এবং নিরাপত্তা ক্যামেরায় ফ্লাইটের আগে ধারণকৃত ভিডিও দেখে পাইলটদের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করেছে। এতে কোনো উল্লেখযোগ্য আচরণগত পরিবর্তন বা আর্থিক সমস্যার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ দেখেছে, একজন পাইলট তার হোম ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহার করে একটি সিমুলেটেড ফ্লাইট করেছেন যা এমএইচ৩৭০ অদৃশ্য হওয়ার আগে যে পথটি নিয়েছিল বলে মনে করা হয় অনেকটা সেরকম।। তবে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত পরিবহন মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন বলেন, সিমুলেটর থেকে অশুভ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক ২০১৪ সালে বলেছিলেন, রাডার ট্রান্সপন্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেম উভয়ই বিমানের অবস্থান লুকানোর জন্য ফ্লাইটের কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। এর ফলে কেউ কেউ অনুমান করছেন যে, বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে।

ছিনতাইয়ের সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে বেশ কয়েকজন যাত্রীকে তদন্ত করা হয়। তবে বিমানের নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে কোনো যাত্রীর যোগসূত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/আইই

ওশান রোবটিক্স টপ নিউজ ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ মালয়েশিয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর