কুসিকে ৪ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২৫%
৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৬
কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
রিটার্নিং অফিসার ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানান। এর আগে, শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ইভিএমে শুরু হয় ১০৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ।
ফরহাদ হোসেন বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার সংখ্যা বাড়ছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সকালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। তবে তিনি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ জানান। একই অভিযোগ জানান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আরও দুই প্রার্থী।
নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় এজেন্ডারা ঢুকেছেন। আবার কিছুক্ষণ পরে এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। এভাবে চলছে তাদের খেলা।’
তিনি বলেন, ‘১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে আমার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এজেন্ট যারা ভেতরে ঢুকেছেন, তাদের হুমকি দিয়ে ভেতরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে কোনো লোককে যেতে দিচ্ছে না, ভোটারদের যেতে দিচ্ছে না। হাজী আকরাম উদ্দীনে (হাজী আকরাম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে) কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দিচ্ছে না। শুধু তাদের চিহ্নিত ভোটাররা সেখানে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন।’
কারা শক্তি প্রয়োগ করছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নূর উর মাহমুদ তানিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভোটারদের বাধা দিচ্ছে একটি প্রার্থীর সমর্থকরা, সেটা হলো বাস মার্কা। তার কর্মীরা কালকে রাত থেকেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। আমার কর্মীসহ বিভিন্ন মার্কার কর্মীদের ডেকে ডেকে ধমক দিয়ে দিচ্ছেন যে, সকালে যাতে কেন্দ্রে না দেখি, আশেপাশেও যাতে না দেখি— এভাবে হুমকি দিচ্ছে। বাস প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন সব জায়গায় শক্তি প্রয়োগ করছে।’
নারী ভোটারদের ধাক্কা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করার অভিযোগ করে নূর উর মাহমুদ তানিম বলেন, ‘কুমিল্লা হাই স্কুলে এজেন্টই ঢুকতে দেয়নি কোনো প্রার্থীর। পরে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানোর পর তিনি এসে পদক্ষেপ নিয়ে তাদের ঢুকিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট কতক্ষণ পাহারা দেবেন? আবার বের করে দেবে। যারা বের করেছে, তারা কিন্তু চিহ্নিত। বিভিন্ন জায়গার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এই কাজগুলো করছেন।’
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ফলাফল মানবেন কি না— এ প্রশ্নের জবাবে নূর উর মাহমুদ তানিম বলেন, ‘মাত্র তো শুরু হলো। যেভাবে ভোটারদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি এজেন্টদের চাপে রাখা হচ্ছে, তাতে সকালেই মন্তব্য করা সম্ভব না। এখনো অনেক জায়গায় এজেন্টদের ঢুকতেও দেওয়া হয় নাই। সকালেই যদি এমন হয়, তবে সারাদিন নিয়ে কি হবে তা নিয়ে পরেই কথা বলি। সারাদিনের পরিস্থিতি দেখে আমি দুপুরের পরে মন্তব্য করব।’
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীদের হটিয়ে দিন। ভোটারদের চলাচলের রাস্তাগুলো উন্মুক্ত করে তাদের নিরাপত্তা দিন। কর্তৃপক্ষের প্রতি এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমার এ আহ্বান থাকবে। আশা করি নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবেই বিষয়গুলো মোকাবিলা করবেন। তারা তাদের তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের ফোনের জন্য অপেক্ষা করার তো দরকার নেই।’
অপর মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও ভোট দেওয়ার পরে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একই অভিযোগ জানান। সকালে নগরীর হোচ্ছাম হায়দার উচ্চবিদ্যালয়ে ভোট দিতে এসে তিনি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ একদমই ভালো না। ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। বাস প্রতীকের লোকজন ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিচ্ছে। অন্য প্রতীকের কর্মীদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছেন। অনেক কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি।’
সাবেক এই মেয়র আরও বলেন, ‘তিনটি ওয়ার্ডে খবর নিয়েছি কোথাও আমার কোনো এজেন্ট ঢুকতে পারেনি। অভিযোগ করে প্রতিকার পাচ্ছি না। কার কাছে অভিযোগ করব? এর কাছে বললে বলে ওর কাছে যাও। মোট কথা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমার জয় হবেই।’
নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের পর ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার অভিযোগ করেন, ‘১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলাগুলি হয়েছে। তার এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
তবে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী আরেক মেয়র প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। যারা অভিযোগ করছেন, তাদের মাঝে দুইজন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের। যাদের কাজ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর আরেকজন প্রার্থী আসলে স্বঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন সব স্থানে। তারা অভিযোগ করলেও কোনো প্রমাণ কিন্তু দিতে পারেন নাই। আর এখন তো মোবাইলের যুগ। যে কেউ যেকোনো স্থানে চাইলেই লাইভ করতে পারে। যদি অনিয়ম হতো তবে সেগুলো তো সাংবাদিকদের চোখেই পড়ত। তাই না?’
এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা হাইস্কুল কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর নারী সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৯ মার্চ) কুমিল্লা হাইস্কুল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বাস ও টেবিল ঘড়ির সমর্থকদের মধ্যে এ মারামারির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
সার্বিক ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ছোটখাটো কিছু অভিযোগ আসছে। এগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা দেখছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও ধীরে ধীরে বাড়ছে।’
এবারের কুসিক উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চারজন হলেন সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু (দেয়াল ঘড়ি প্রতীক), মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি প্রতীক), মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা তাহসীন বাহার সূচনা (বাস প্রতীক) এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া প্রতীক)।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মাঝে পুরুষ এক লাখ ১৮ হাজার ১৮২ ও এক লাখ ২৪ হাজার ২৭৪জন নারী ভোটার। এদের মধ্যে হিজড়া ভোটার রয়েছে দুইজন। ১০৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে স্থায়ী ভোট কক্ষ ৬১৬টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ২৪টি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস