বিজিএমইএ নির্বাচনে ফল বদলে যাওয়ার শঙ্কায় ফোরাম
৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৬
ঢাকা: দেশের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন চলছে। নির্বাচনে এবার দু’টি প্যানেল সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে সম্মিলিত পরিষদ ভোটে প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ এনেছে প্যানেল ফোরাম। ভোট শুরু আগে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনের আগের রাতে ফোরামের ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ফোরাম নেতারা। সবমিলিয়ে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকলেও ফল নিয়ে শঙ্কিত ফোরাম।
শনিবার (৯ মার্চ) ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামের দক্ষিণ খুলশীতে অবস্থিত বিজিএমইএ’র আঞ্চলিক কার্যালয়ে একযোগে ভোট চলছে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
গত কয়েকবছর ধরে বিজিএমইএ নির্বাচনে মূলত দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম- এই দুটি প্যানেলের নেতারাই বিজিএমইএ’র সভাপতি ও অন্যান্য পদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এবার ফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন
বিজিএমইএ’র সাবেক জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ও সুরমা গার্মেন্টেসের মালিক ফয়সাল সামাদ। অপরদিকে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ও সেহা ডিজাইন (বিডি) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম মান্নান কচি। বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান সম্মিলিত পরিষদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে এসেছেন। আর তার আগের কমিটির সভাপতি ড. রুবানা হক ফোরামের নেতা। রুবানা হকের কমিটিতে ফয়সাল সামাদ জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ছিলেন। আর সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তাই প্রশ্ন না উঠে এমন নির্বাচন করার আহ্বান বারবার জানিয়ে আসছিলেন ফোরাম নেতা ফয়সাল সামাদ।
শনিবার দুপুরে ফোরাম’র প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ এখন ভালো রয়েছে। তবে ভোট কেন্দ্রে আরও শৃঙ্খলা থাকা প্রয়োজন ছিল। তবে ভোটের ফলাফল নিয়ে আমরা শঙ্কিত। ফলাফল বদলে দেওয়া হতে পারে।’
ফোরামের একাধিক নেতা সারাবাংলাকে জানান, শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে ফোরামের কোনো ব্যানার-পোস্টার টাঙানো যায়নি। আগে থেকে টাঙানো ব্যানার পোস্টার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের সামনে থেকে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ভোট শুরুর আগে শনিবার সকালে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কমিশনে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
ফোরাম প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘সকালের দিকে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সেটা নিয়ে এখন আর বলতে চাই না। তবে এখন ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। এভাবে ভোটগ্রহণ চললে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে ভোট গণনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেখানে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন শক্ত অবস্থান নিলে সেখানেও সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে। আমরা চাই ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়ে আসুক।’
ফোরাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মো. খায়ের মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘সকাল পৌনে ১০টার দিকে আমাদের ভোটারদের এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। মেইনগেটের বাইরে তাদের মারধর করে পার্শ্ববর্তী শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ভোটের পরিবেশ ফিরে আসে।’
ফোরামের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ খুবই সুন্দর রয়েছে। এখানে কোনো বহিরাগত নেই। ভালো পরিবেশ রয়েছে, আমাদের প্রার্থীও পরিক্ষিত। আশা করি পুরো প্যানেলে জয়ী হব।’
তবে সম্মিলিত পরিষদ বলছে, ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। এখানে কোনো প্রভাব বিস্তারের কিছু হচ্ছে না। সম্মিলিত পরিষদ সদস্য সচিব সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এখানে মারধরের কোনো ঘটনা আমার চোখে পড়েনি। আমরা নির্বাচনে এসেছি, দিন শেষে সবাই ব্যবসায়ী। সবাই আমরা একে অপরের সহযোগী।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বিজিএমইএ নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৬। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের ভোটার ২ হাজার ৪৯৬ ও চট্টগ্রামের ৪৬৪। ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামের দক্ষিণ খুলশীতে অবস্থিত বিজিএমইএ’র আঞ্চলিক কার্যালয়ে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উভয় অঞ্চলের ভোটার যেকোনো একটি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে পারবেন। প্রত্যেক ভোটারকে ৩৫টি ভোট দিতে হবে, অর্থাৎ ঢাকায় ২৬ জন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। কম বা বেশি ভোট দিলে পুরো ব্যালট বাতিল হয়ে যাবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫টি পরিচালক পদে প্যানেল দুইটি থেকে লড়ছেন ৭০ জন প্রার্থী।
নির্বাচনে পরিচালক নির্বাচিত হবার পর সংগঠনের সভাপতি এবং প্রথম সহ-সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং দু’জন সহ-সভাপতি নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়া হবে। তাদের মনোনয়ন বাছাই শেষে ১৯ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সাধারণত নির্বাচনের দিনই নেতা নির্বাচন চূড়ান্ত হয়। নেতা নির্বাচন নিয়ে আপত্তি থাকলে আপিলের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপিল নিষ্পত্তির পর ২৮ মার্চ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। যারা ২০২৪-২৬ মেয়াদের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস