Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহরের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে— আলোচনায় বক্তারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ মার্চ ২০২৪ ০০:০১

ঢাকা: শহরের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। সেইসঙ্গে লেবার সেভিং টেকনোলজি উদ্ভব হওয়ায় তাদের ছাঁটাইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রাক-বাজেট আলোচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় বিষয়গুলো পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়।

রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে সংস্থার আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে নারীর জন্য বিনিয়োগ অপরিহাযর্য’- বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিষয়গুলো উঠে আসে।

আলোচনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রকাশিত ডাটার আলোকে নরওয়ে, ভিয়েতনাম ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাসহ অন্যান্য অবস্থানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলেই একটি দেশের নারীদের উন্নতি হবে এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। নারীদের জন্য আলাদা বরাদ্দের খাত থাকতেই হবে। নিজ দেশের বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। আইসিডিডিআর’বি-এর গবেষণায় বলে শহরের ৫০% পুরুষ মনে করে, নারীদের নির্যাতন সহ্য করতে হবে। অন্যদিকে, শহরে লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশনে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬%। এখানে নারীর জন্য সেবামূলক কর্মসূচি বাড়াতে হবে। জেন্ডার বাজেটের কার্যকর প্রয়োগ ঘটাতে হলে নারীবান্ধব প্রজেক্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এছাড়া সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত, মালিকানার সমতা ও স্বত্বাধিকারের ওপর জোর দিতে হবে।’

আলোচনায় গেস্ট অব অনার ছিলেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, এমপি। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন, সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বোর্ড অব ডিরেক্টর প্রীতি চক্রবর্তী।

সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘বাজেট তৈরি হলেও নারীর জন্য থাকা ক্রিটিক্যাল বিষয়গুলো যেমন- ফেমিনিজম অব এগ্রিকালচার, জেন্ডার লেন্স’র প্রতিফলন দেখা যায় না। নারীরা সর্বহারা। এমন পরিস্থিতির উত্তরণে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বাস্তবায়ন ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার আইনে আনতে হবে।’

বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘১৫ থেকে ২৯ বছরের নারীর শিক্ষার হার পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিক্ষায় অনেকটা সাম্য অর্জিত হয়েছে। এর সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটা রূপান্তর ঘটেছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অর্থনৈতিক দিক শক্তিশালীকরণ ও সামাজিক পুঁজির দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নারীরা অনেকে অবৈতনিক খাতে কাজ করছেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে ও তাদের নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।’

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জেন্ডার বাজেটের সংজ্ঞায়ন পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। সংসদে বাজেট প্রণয়নের আগে বাজেট নিয়ে আলোচনা করা না গেলেও বাজেটের কাঠামো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তাই সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ ইতিবাচক ভাবে দেখা গেলেও আসলে অন্যান্য কাজে যুক্ত হওয়ায় পুরুষের ছেড়ে দেওয়া জায়গায় নারীর অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে। এখানে নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষম্য বিদ্যমান। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে গেলে এর নেতিবাচক অভিঘাত পড়বে নারীর ওপর। এই অবস্থায় সরকারের কাছে বিশেষায়িত ফান্ড তৈরির দাবি জানাতে হবে।’

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, চাইল্ড কেয়ার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মেয়েদের শিক্ষায় অগ্রগতি হলেও উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। এবিষয়ে গবেষণা হওয়া দরকার।’

মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, ‘সাম্প্রতিক যুদ্ধসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকটে নারীর অগ্রগতির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ৪৪টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট প্রণীত হলেও তা জেন্ডার বৈষম্য দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠায় কতটা কার্যকর হচ্ছে সেটি এখন মনিটরিং করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘বাজেট সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একটি মাধ্যম। নারীর উন্নয়নে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এই উন্নয়নকে টেকসই করতে এখন সরকারের বাজেট বিশ্লেষণে করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় থাকা চ্যালেঞ্জ উত্তরণে আর্থিক বিনিয়োগের ওপর এখন গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিক নীতি, সামাজিক নীতি, শিক্ষা সুরক্ষানীতিসহ সব নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদের উপস্থিতি এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। নারীর জীবনমান উন্নয়নে ও নিরাপত্তা রক্ষায় এনার্জি সেক্টরের ওপরও জোর দিতে হবে।’

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

অংশগ্রহণ টপ নিউজ নারী শ্রমবাজার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর