ঢাকা: দেশের নারীদের অধিকার ও সুযোগ বাড়িয়ে নারীর ক্ষমতায়ন আরও বেগবান করতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। নারী দিবসের এক অনুষ্ঠান থেকে সামাজিক ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি— এই চারটি জায়গায় বিনিয়োগে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
রোববার (১০ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি)।
এ বছর ‘নারীর সমঅধিকার, সম সুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সমাজবিজ্ঞানী ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
নারী দিবস উদ্যাপন আয়োজনে আর্ট ক্যাম্প, পুরস্কার প্রদানসহ ছিল প্যানেল ডিসকাশন। ‘নারী নেতৃত্ব উদ্যাপন: আমরা কি যথেষ্ট বিনিয়োগ করছি?’ শীর্ষক আলোচনায় বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। এ সময় বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে নারীদের সমান অধিকার ও সমসুযোগ শক্তিশালী করতে দেশের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের পরিচালনায় প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির (এএআইবিএস) চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল-জায়াদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন, কবি ও পরিচালক শামীম আজাদ এবং এভারকেয়ার হাসপাতালের ডার্মাটোলজি বিভাগ ও লেজার সেন্টারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর ডা. জেসমিন মঞ্জুর।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, নারীর উন্নয়ন নিশ্চিতে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি, যা গত পাঁচ বছরে আমাদের মূল বাজেটের ১৫ শতাংশ। নারীদের প্রশিক্ষণ, সুরক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশসহ ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে এখন পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক নারীর কাছে পৌঁছেছি আমরা। এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়সের বিভিন্ন সূচকসহ নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, লিঙ্গসমতা অর্জন করতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হতে পারে প্রায় ২০০ বছর, যেখানে বিশ্বের সময় লাগতে পারে ১৩২ বছর। এ ছাড়া আইনি অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের নারীরা দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের চেয়ে পিছিয়ে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে দেশের নারীরা পুরুষের তিন ভাগের এক ভাগ মাত্র আইনি অধিকার ভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন বলেন, মেয়েদের ওপর বিনিয়োগ অগ্রাধিকার হিসেবে নয়, একান্ত প্রয়োজন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নারী-পুরুষ বৈষম্য কমাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে শেষ এলাকার নারীর জন্য বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এখন সরকারের সক্ষমতা হয়েছে। নারীদের উন্নয়নে আমাদের তাদের শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সবার মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।
কবি ও পরিচালক শামীম আজাদ বলেন, আমাদের সবার আগে নৈতিক বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। আমরা বিনিয়োগ বলতে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বুঝি। নারীর জন্য বিনিয়োগ করতে হবে পুরুষ চিন্তার সম্প্রসারণের জন্য। পুরুষদের উপলব্ধির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
এই আয়োজনে তৃণমূল পর্যায় থেকে তিন নারী— এমিলী হেম্বরম (যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী), নাছরিন আক্তার (জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় নারী নেতৃত্বে) এবং ফাহমিদা বেগমকে (নারী উদ্যোক্তা) ‘নাসরীন স্মৃতি পদক-২০২৩’ পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের তরুণ নেতা, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।