Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোড়া গন্ধে হারিয়ে গেল বেইলি রোডের ইফতার বাজার

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৭

ঢাকা: ২৯ ফেব্রুয়ারির আগুন যেন সবকিছু স্তব্ধ করে দিলো। রাজধানীর বেইলি রোডে কজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনাটি স্মরণকালের ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে। পাশাপাশি তা যেন স্থানীয় হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে নামিয়ে এনেছে অন্ধকার। ফলে রমজানের প্রথম দিন থেকেই এলাকার ইফতার সামগ্রীর বাজার আগের মতো সরগরম হয়ে ওঠেনি।

এই রোডের ইফতার সামগ্রী যেন ঢাকার ঘরে ঘরে এক ঐহিত্যের নাম। বাহারি স্বাদের খাবার কিনতে দলে দলে আসতেন রোজাদাররা। পুরো রমজান মাসে একবার হলেও বেইলি রোডের ইফতার খাওয়ার ইচ্ছা কার না জাগে! আবার অনেকে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন পরিবার পরিজন নিয়ে এখানকার রেস্তোঁরাগুলোতে ভিড় জমাতেন। কোনো কোনো সময় এমনও হতো যে, মানুষের ভিড়ে ঠিকমতো কেনাকাটা করা যেন দায় হয়ে যেত।

বিজ্ঞাপন

প্রথম রোজার দিনে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে বেইলি রোডে সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ হোটেল রেস্তোঁরাই বন্ধ। ব্যবসায়ীদের দাবি— ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এই রোডের অধিকাংশ রেস্তোঁরা বন্ধ হয়ে গেছে। এর কয়েকদিন পর প্রতিষ্ঠান খুলতে চাইলেও কেউ খুলতে পারেননি। কারণ প্রতিদিনই কোনো না কোনো সরকারি অভিযান থাকছে। আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিক থেকে ঢুকেই বিকেলে চোখে পড়ে ফখরুদ্দিন হোটেল। হোটেলটি বন্ধ ঘোষণা করে টানানো হয়েছে ব্যানার।  ফখরুদ্দিনের সামনের সড়কের দুই পাশে কোনো দোকানপাট নেই। শাড়ির যে কটি দোকান রয়েছে সেগুলোও ক্রেতা শূন্য।

একটু এগিয়ে দেখা যায়, বস সুইটস নামে মিষ্টির দোকান। সেখানে জিলাপি ভাজা হচ্ছে। ভেতরে কিছু ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে কিন্তু ক্রেতা আগের মতো নেই বললেই চলে। দু-একজন হাঁটাহাঁটি করছে। কিনবেন, কি কিনবেন না তা ভাবছেন!

বিজ্ঞাপন

একটু এগিয়ে কেএফসি ভবনে থাকা বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টের দেখা মেলে। সেখানে থাকা থার্টি থ্রি, কেএফসি, পিজ্জা হাট ও বেকার স্টোর বন্ধ থাকতে দেখা যায়। সামনে কোনো লোককেও দেখা যায়নি।

এ ভবনের পাশেই ইতিহাসে সাক্ষী হওয়া কজি কটেজ ভবন। আগুনে ভবনটি এমনভাবে পুড়েছে যেন একটি ভুতুড়ে বাড়ি। যার রং কালো, ভবন এলাকায় সুনসান নীরবতা এবং দেখতে রাক্ষুসে চিত্রের মতো। কেউ কেউ বাচ্চাদের এনে ভবনটি দেখিয়ে দিয়ে জানাচ্ছেন সেদিনের বর্ণনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুইস রেস্টুরেন্টে চলছে ইফতার বিক্রি। তবে বাইরে নয় একেবারে ঘরের ভেতরে। প্রতিবার যেমন সড়কের পাশে বাহারি আইটেমের ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসতেন আর হাঁকডাক করতেন, ক্রেতারা আকৃষ্ট হতেন আর দেখে ইফতার সামগ্রী কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতেন সেই চিত্রটা আজ দেখা যায়নি।

পুরো বেইলি রোড ঘুরে একমাত্র এ ওয়ান রেস্তোঁরাতেই দেখা যায় হাতে গোনা কিছু ক্রেতার ভিড়। তবে সেটিও ভেতরে। এবার বাইরে কেউ ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসতে পারেনি। এ ছাড়া শান্তিনগর অংশে রোডের মাথায় প্রভিক্স ও চিলক্স রেস্তোঁরাও বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। সবমিলিয়ে পুরো রোডে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। সড়কে ভিড়ের পরিবর্তে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।

সুইস রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ী হাসান মাহমুদ সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক আগুনই সব শেষ করে দিলো। এর আগে দুপুর না হতেই মানুষ উপচে পড়ত ইফতার সামগ্রী কেনার জন্য। অথচ এবার প্রথম রোজায় ক্রেতা শূন্য বেইলি রোডের ইফতার বাজার।’

এ ওয়ান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সাহাদাত আলী রিপন বলেন, ‘আমাদের রেস্তোরাঁটি সব নিয়ম মেনে করা হয়েছে। অভিযানেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখে গেছেন। আমরা আজ বেশ কিছু আইটেম নিয়ে ইফতার বসিয়েছি। তবে ক্রেতা বেশ কম।’

অন্যদিকে বেইলি রোডের হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্রেতা কম থাকায় বিপাকে পড়েছে ছিন্নমুল গোষ্ঠী। যত বেশি ক্রেতা আসত ততবেশি ছিন্নমুল মানুষ ও শিশুদের খাবার টাকা পয়সা দিত। যেখানে ক্রেতাই নেই সেখানে কার কাছে হাত পাতবে।

ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বেইলি রোডে কোনো দোকানপাট বসতে পারবে না। যারা ভবনে হোটেল-রেস্তোরাঁ বসাবেন তাদের অবশ্যই ইমারত বিধিমালা ও অন্যান্য আইনি দিক মেনে চলতে হবে।’

আরও পড়ুন
বেইলি রোডের সুলতান’স ডাইন ও নবাবী ভোজ সিলগালা
ভবনে আগুন: ক্রেতাশূন্য বেইলি রোডের রেস্তোরাঁ-শপিং মল
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড: হতাহতদের ক্ষতিপূরণে হাইকোর্টের রুল
বেইলি রোডে আগুন: পাশাপাশি চিরশায়িত স্বামী-স্ত্রী-সন্তান
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: এ শহরে শুধু মানুষের মূল্য নেই
বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় মামলা
‘বেইলি রোডে আগুনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’
‘বেইলি রোডে আগুনে মৃত্যু অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

ইফতার বাজার ইফতার সামগ্রী বেইলি রোড বেইলি রোডের ইফতার

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর