Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাক্তার মালয়েশিয়ায়, নাম ভাঙিয়ে চলছিল চিকিৎসা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:২৬

ঢাকা: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২০০৫ সেশনের শিক্ষার্থী ডা. সাদিয়া চৌধুরী শিম্মি বর্তমানে আছেন মালয়েশিয়ায়। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী তার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও আপডেট করা। তবে তিনি দেশে না থাকলেও তার নাম ব্যবহার করে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন ৪৩ বছর বয়সী সাদিয়া আক্তার। কোনো ধরনের সনদ না থাকলেও চিকিৎসক সেজে সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডক্টরস চেম্বার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি।

স্থানীয়দের কাছে সাদিয়া আক্তার নিজেকে একজন মেডিসিন, গাইনি, মা, শিশু ও বন্ধ্যত্ব রোগের চিকিৎসক পরিচয় দিতেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সি-সেকশন অস্ত্রোপচারও করাতেন তিনি। অনুমতি না থাকলেও সেখানে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল। গত ৫ মার্চ একজন প্রসূতি নারীর সি-সেকশন করতে গিয়ে অবস্থা খারাপ হলে তড়িঘড়ি করে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে সেই প্রসূতি মা ও নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালান গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিকের নেতৃত্বে একটি দল। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা, ডা. সাবিনা আক্তার, থানার এসআই এমরুল কবিরসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নানা অনিয়ম সামনে এলেও সাদিয়া আক্তারের কথাবার্তায় তার চিকিৎসক পরিচয় নিয়ে সন্দেহ হয় অভিযান চালানো দলের। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহার তৎপরতায় জানা যায়, সাদিয়া মূলত আরেকজন চিকিৎসকের পরিচয় ব্যবহার করে সেখানে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন।

শুরুর দিকে অস্বীকার করলেও ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় জানায় সাদিয়া আক্তার। তিনি ঢাকার মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া এলাকার মুহিত খানের মেয়ে। একপর্যায়ে সাদিয়া স্বীকার করেন তিনি আরেকজন চিকিৎসকের বিএমডিসি সনদ ব্যবহার করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। এমনকি অস্ত্রোপচারও করে আসছিলেন।

এ সময় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সাদিয়া আক্তারকে আটক করেন। একইসঙ্গে সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার ও ফার্মেসিকে ৫০ হাজারসহ মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। পরে বিভিন্ন অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণে সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করা হয়।

বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে থানায় আটক সাদিয়া আক্তারকে বুধবার (১৩ মার্চ) কোর্ট হাজতে পাঠানো হবে বলেও জানান কর্তৃপক্ষ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা সারাবাংলাকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা, আমার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন ও গাইনি) ও বিএসটিআই প্রতিনিধিসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সেখানে আমরা নানা ধরনের অনিয়ম পাই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ডায়াগনস্টিক কিট পাওয়া যায়। সেন্টারটিতে থাকা এক্স-রে রুমের নিয়ম না মানার পাশাপাশি লাইসেন্স ছাড়াই ফার্মেসি চালু রাখা হয়।

তিনি বলেন, অভিযানে আমাদের কাছে সন্দেহ হলে সেখানে থাকা সাদিয়া আক্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। তিনি আরেকজনের বিএমডিসি সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন। পরে তাকে স্থানীয় থানায় আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০ এর ২২ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়। যার ন্যুনতম সাজা তিন বছরের জেল। এছাড়া ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ধারা ৫১, ৫২ অনুযায়ী সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করি। সেটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের সকল অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা খাতা যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দেশের সকল স্থানে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানেই অনিয়ম পাব সেখানেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করব।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক সারাবাংলাকে বলেন, সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে নানা ধরনের অপকর্ম হচ্ছিল সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা বিষয়টি জানানোর পরে সেখানে অভিযান চালাই। অভিযানের সময় জানতে পারি আরেকজন চিকিৎসকের পরিচয় ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন সাদিয়া আক্তার। পরবর্তীতে আমরা তাকে আটক করি।

তিনি বলেন, চিকিৎসকের কাছে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতেই যায়। কিন্তু সেখানে যদি প্রতারণা শিকার হতে হয় কাউকে, তবে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও কিটের পাশাপাশি নানা রকমের অনিয়ম করা হয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে অভিযান চালানো হবে।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর