নিউইয়র্ক আবৃত্তি উৎসব পরিচালনা পর্ষদ গঠন
২৫ মে ২০১৮ ১৭:৩৮
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
ঢাকা : বাংলা ভাষাকেন্দ্রীক আবৃত্তিকলা ও শিল্পমাধ্যম নিজস্ব সীমারেখাকে ছাড়িয়ে সংগঠিত আন্দোলনের রূপ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপ্তি লাভ করলো নিউইয়র্ক আবৃত্তি উৎসব ২০১৮ উদযাপনের মধ্য দিয়ে।
শিল্পচর্চার এই দ্রোহের ভাবনা ও মুক্তচিন্তার বাক্-অধিকার প্রতিষ্ঠায় – প্রতি দুই বছরের অন্তে নিউইয়র্কে বৃহত্তর পরিসরে রুচিশীলতার উৎকর্ষতায় মানঋদ্ধ আবৃত্তি উৎসব পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এই পর্ষদটির নামকরণ করা হয়েছে ‘নিউইয়র্ক রেসিটেইশন ফেস্টিভাল কমিটি’।
নিউইয়র্কসহ সংলগ্ন ট্রাই স্টেটের প্রায় অর্ধ শতাধিক আবৃত্তি শিল্পীদের উপস্থিতিতে এবং শিল্পকলার অন্যান্য শাখার নাট্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পী, বরেণ্য গুণীজনসহ প্রায় তিন শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি নিয়ে মিলনমোহনায়, ২০১৮ এর নিউইয়র্কে প্রথম বারের মতো আয়োজিত আবৃত্তি উৎসব বিপুল সংখ্যক দর্শক শ্রোতার উপস্থিতিতে-নন্দননিকেতনের সজ্জিত মিলনায়তন প্রাঙ্গণে সফলভাবে উদযাপিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবৃত্তি উৎসবের সংগঠিত আয়োজক কাঠামোর ঘোষণাটিও ছিল খুবই আশাব্যঞ্জক, উৎসাহ উদ্দীপক ও বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত অব্যক্ত উচ্চারণেরই একটি ভাষ্য।
আবৃত্তিশিল্পী নাট্যকর্মী সুদক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠক আবীর আলমগীর এর নাম উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হওয়ার ঘোষণা এবং খ্যাতিমান আবৃত্তিকার মিথুন আহমেদের নাম চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষিত হলে উপস্থিত অভ্যাগতরা মুহুর্মুহু করতালিমুখর হয়ে অভিনন্দন জানান এবং ২০১৮ আবৃত্তি উৎসব কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ মঞ্চের সম্মুখে সারিবদ্ধ স্বাগত জানান।
মিথুন আহমেদ
মিথুন আহমেদ আশির দশকে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্প আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আবৃত্তিকে পদ্ধতিগতভাবে পরিশীলনে নতুন চিন্তাজগত তৈরীতে বাচিক শিক্ষাক্রম পরিচালনা এবং শিল্পের প্রচলিত ছককে ভেঙে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রথা-বিপ্রতীপ আবৃত্তি প্রযোজনা নির্দেশনা দেন। আবৃত্তির জনপ্রিয়তা গড়ে তুলতে মধ্য আশি থেকে এ যাবৎ প্রকাশিত হয়েছে তার একুশটি আবৃত্তি এবং চারটি শ্রুতিনাট্যের এ্যালবাম। তিনি বাংলাদেশে প্রথম শ্রুতি নাট্য চর্চার সূচনা করেন। শ্রুতি নাট্যে সহশিল্পী হয়ে যুগলবন্দীতে অভিনয় করেছেন আলেয়া ফেরদৌসী, তারানা হালিম, শিরিন বকূল ও শমী কায়সার।
কাব্যনাট্য ‘ ওরা কয়েকজন’ ১৯৮৮ সালে বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রথম পার্থ’ পাঠাভিনয়ে এবং ১৯৮৭ সালে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় জার্মান কালচারাল সেন্টার ‘গ্যাটে ইন্সটিটিউট’ আয়োজিত মহাকবি গ্যাটের ‘ফাউস্ট’ রিডিং থিয়েটারে অভিনয় করেন। আবৃত্তির নবতর নিরীক্ষায় ১৯৮৮ তে নিজে গড়ে তোলেন ‘বাচনিক’ নামে বাকশিল্পের প্রতিষ্ঠান।
আবীর আলমগীর
আবীর আলমগীর প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চেতনার ধারাকে বিশ্বাস করেন বলেই ছাত্র ইউনিয়নের কালচারাল ব্রিগেড, ‘উদীচী’ ও ‘খেলাঘর’ এর সংগঠনগত কার্যক্রমের স্পৃহা থেকে উৎসারিত হয়ে নিজের শিল্পীমন গড়ে তুলেছেন সেই শৈশব থেকেই। নাট্যকর্মকান্ড এবং আবৃত্তির প্রতি আগ্রহশীল মনোভঙ্গী ও বিশেষিত দূর্বলতা তার চর্চাক্ষেত্রকে বহুধা বিস্তৃত করেছেন। তারুন্যর একটা সময় পর্যন্ত উচ্চাঙ্গ এবং রবীন্দ্র সংগীতে তালিম নিয়েছেন রংপুর শিল্পকলা একাডেমীতে।
গত তিন দশকেরও অধীক এই অভিবাসন যাপন তাঁকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি সেই স্বদেশীকতার দূর্নিবার আকর্ষণ ও দেশমাতৃকার প্রতি অপরাহত দায়বদ্ধতা থেকে। যুক্ত রয়েছেন ‘ড্রামা সার্কল’ এর সাথে দীর্ঘ দুই দশকেরো বেশী সময়ধরে, বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন সভাপতি পদে। উত্তর আমেরিকার সামাজিক সংগঠনসমূহের বৃহত্তর প্লাটফরম ‘ফোবানা’র সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন অতপ্রতোভাবে। সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তিনি।
সালেক খানের নির্দেশনায় হেনরিক ইবসেনের ‘ডলস হাউস’, জামাল উদ্দিন হোসেনের নির্দেশনায় জেবি প্রিসলির ‘এন ইন্সপেক্টর কলস’, সুদীপ্ত চট্রোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন তিনি।
সারাবাংলা/এমএইচ