‘ভোটের জন্য এলে জানতে চাইবেন তুরাগ-বুড়িগঙ্গার জন্য কী করবে’
১৩ মার্চ ২০২৪ ২৩:৪৪
ঢাকা: নদী দখল-দূষণকারীদের নামের তালিকা থাকার পরও তাদের উচ্ছেদ বা শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না। তাই, আগামীতে যারা ভোট চাইতে আসবে তাদের তুরাগ-বুড়িগঙ্গার জন্য কী করবেন- সে কথা জিজ্ঞাসার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
বুধবার (১৩ মার্চ) আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকার গাবতলীর ল্যান্ডিং স্টেশন ঘাটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জলাধার পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা এই জলাধারগুলো বিভিন্নভাবে নষ্ট করে ফেলছি। আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী রেখে যেতে এখন থেকেই উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।’
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার, আমিন বাজার ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থা, এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভস, গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটি, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, অর্গানাইজেশন ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন, স্বপ্নের সিড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, সচেতন নাগরিক সমাজ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, ভয়েজ অফ দ্যা ওলড ব্রহ্মপুত্র রিভার, রিভার বাংলা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে দেশের নদীর দূষণ-দখল রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে মানববন্ধন, প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা, মাঝিদের মাঝে ঝুড়ি বিতরণ করা হয়। অর্গানাইজেশন ফর ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন’র পক্ষ থেকে মূকাভিনয় প্রদর্শন করেন পরিবেশকর্মী আবু সাদাত মো. সায়েম।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা।
সভাপতির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ‘ঢাকার নদীগুলো সংরক্ষণের নামে আমরা দূষিত নর্দমায় পরিণত করেছি। তুরাগ অববাহিকায় নদীর দখল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এককালের কহর দরিয়ার এখন কোথাও কোথাও দুটি নৌকা একসঙ্গে চলতে পারে না। বর্তমানে নদীগুলোর পানি কুচকুচে কালো ও দুর্ঘন্ধময়। নদী রক্ষায় দিবসভিত্তিক নয়, প্রতিদিনই কাজ করতে হবে।’
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সোলায়মান সুখন বলেন, ‘যারা নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে তারাই প্রকৃত মানুষ। নদী ও পরিবেশ রক্ষার এই কর্মসূচিতে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ।’ এ সময় পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে আরও বেশি কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শের-এ বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর পরিবেশ কর্মী মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি আজকের এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করছি। দখল-দূষণ যা হয়েছে তা কমিয়ে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেন নদী দখল-দূষণ মুক্ত থাকতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে।’
পরিবেশবাদী ও আইনজীবী জিএলটিএস লিডারশিপ প্লাটফর্ম’র সভাপতি রাওমান স্মিতা বলেন, ‘আমরা সমস্যা জানি, সমাধানও জানি। কিন্তু সমস্যা সমাধানে স্বদিচ্ছার অভাব। জ্যেষ্ঠ প্রজন্ম একটা টেকসই বাংলাদেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে! তাই নিজেদের জীবন বাঁচাতেই নদী রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসা ছাড়া উপায় নাই। তবে তরুণদের শুধু আলোচনা সভা ও দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। তাদের নেতৃত্ব নিতে হবে। নদী ও দেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।’
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম