‘শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া লুটেরাদের পরাস্ত করা যাবে না’
১৪ মার্চ ২০২৪ ১৬:০৫
ঢাকা: নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সভায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী বক্তব্য দেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রচারমূলক কিছু পদক্ষেপ নিলেও মুক্তবাজারের ধারা অব্যাহত রাখায় ও সিন্ডিকেট তোষণ নীতির কারণে তা বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন হবে না। মুক্তবাজারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নীতির পরিবর্তন ছাড়া মূল্য বৃদ্ধি ঠেকানো যাবে না। জনগণকেও স্বস্তি দেওয়া যাবে না।
নেতৃবৃন্দ দেশের উৎপাদিত ফসলের ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে সব কৃষি উপকরণের দাম কমানো, প্রকৃত কৃষকদের কাছে সরাসরি সরবরাহ করা এবং উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আমদানিকৃত পণ্য কয়েকজন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি উল্লেখ করে নেতারা বলেন, এদের হাত থেকে মুক্ত না হয়ে ওই সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য নিত্য প্রয়োজনীয় কত পণ্য দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আমদানি ও সুনির্দিষ্ট দামে বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও সারাদেশে ন্যায্য মূল্যের দোকান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেশে থেকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা ও খেলাপি ঋণ আদায়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, চলমান দুঃশাসন ঘটিয়ে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করা ছাড়া এসব লুটেরাদের পরাস্ত করা যাবে না। এজন্য বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দাবিতে লড়াই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
নেতৃবৃন্দ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলাম সরকার যে নীতিতে এ খাত পরিচালনা করতে চাইছে তাতে সংকটের সমাধান হবে না বরং এক পর্যায়ে বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকারের নীতির কারণে এই খাত শুধু দেশের অর্থনীতিতে বোঝা বাড়ানো ও ব্যক্তির কাছে বোঝা বাড়াচ্ছে। এখন আগামী তিন বছর নিয়মিত মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের কাঁধে আরও দায় চাপানোর প্রচেষ্টা নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তারা আরও বলেন, স্থল ও সমুদ্রভাগের গ্যাস যথাযথভাবে অনুসন্ধান উত্তোলনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে জ্বালানি খাতকে আমদানি নির্ভর খাতে পরিণত করা হয়েছে। এসব সম্পদের ওপর দেশের জনগণের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিদেশি কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে সম্পাদিত অসম কোনো চুক্তি জনগণ গ্রহণ করবে না।
সভায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং এর ফলে কৃষি শিল্প উৎপাদনের যে সংকট তৈরি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে সচেতন দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও সভায় জেলা সফরসহ কয়েকটি সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনইউ