এক লাখ কৃষক-বিনিয়োগকারীর মেলবন্ধন এখন ‘অনলাইন বীজ ব্যাংক’
১৪ মার্চ ২০২৪ ২৩:২৩
ঢাকা: প্রায় এক লাখ কৃষক ও বিনিয়োগকারীকে একত্রিত করেছে ‘অনলাইন বীজ ব্যাংক’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ। প্ল্যাটফর্মটিতে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের বীজ ও চারা কেনাবেচা করা যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে বীজ সংক্রান্ত নানা তথ্য। কৃষির অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্পর্কেও তথ্য পাচ্ছেন কৃষক ও উদ্যোক্তারা।
প্রায় তিন বছর আগে এই গ্রুপটি খুলেছিলেন কৃষি কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল ইসলাম। গ্রুপটি খোলার উদ্দেশ্য ছিল সারাদেশের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের একই প্লাটফর্মে এনে কৃষির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বীজের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেসের কার্যক্রম চালু রেখে প্রায় এক লাখ কৃষক ও উদ্যোক্তাকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন বর্তমানে সরকারের সমন্বিত পদ্ধতিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কর্মরত এই কর্মকর্তা।
তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানালেন, জেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সময় অনেকটা শখের বসেই গ্রুপটি খুলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে দেখলাম শত শত মানুষ গ্রুপে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বীজের চাহিদা উল্লেখ করছেন। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে সেই বীজের জোগানের তথ্য অনেকেই দিচ্ছেন। বিষয়টি আমাকে ব্যাপকভাবে অনুরণিত করে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কৃষক তার প্রয়জনের বীজ রংপুরের মিঠাপুকুরের কৃষক অথবা ব্যাবসায়ীদের কাছে পেয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুরের কারও ভার্মি কম্পোস্ট দরকার, ময়মনসিংহের কম্পোস্ট বিক্রেতা গ্রুপে তা বিক্রির তথ্যই দিয়ে দিচ্ছেন। গ্রুপে এখন সদস্য সংখ্যা ৯৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এটি আমরা জন্যে বিশাল এক প্রাপ্তি।’
নোয়াখালির সোনাইমুড়ীর আনোয়ার হুসাইন আফিফ উচ্চ ফলনশীল ঢেড়সের বীজের ছবি গ্রুপটিতে শেয়ার করেছেন। টাঙ্গাইলের কৃষক রনি রায়হান এই বীজের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ময়মনসিংহের রকিবুল হাসান সিয়াম এই গ্রুপে কচুর লতির চারার ছবি শেয়ার করেছিলেন। প্রায় ১৫ জন কৃষক সেই চারার চাহিদার কথা তাকে জানান। সংগ্রহ করেছেন আরও অনেকেই। অন্যদিকে অনামি প্রকাশ মণ্ডল বারোমাসি বরবটির বীজ ও তরমুজের বীজের সরবরাহের কথা উল্লেখ করে গ্রুপে জানিয়েছেন, কৃষকরা বীজ পাওয়ার পর এর দাম পরিশোধ করতে পারবেন।
রাজশাহীর বাসিন্দা জোহা শেখ লিপটন জানান, তার কাছে ৪০০টিরও বেশি দার্জিলিং অরেঞ্জ প্ল্যান্ট ছিল। পেজে ছবি দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পান। কৃষকদের নিজেদের ও তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের নির্বিঘ্নে সংযুক্ত করতে এই গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এই গ্রুপটি চালাতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের কথাই জানালেন মাহমুদুল। তিনি বলেন, বিশেষ করে স্প্যাম ও অপ্রয়োজনীয় পোস্ট খুব ভোগায়। সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সক্রিয় সদস্যদের সমর্থনে, এই চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। এখন ভার্চুয়াল যুগ। কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে নেই, পিছিয়ে থাকবেন না। তারাও এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।’
প্ল্যাটফর্মটির বর্তমান সাফল্যের ধারায় মাহমুদুল ইসলাম ‘অনলাইন বীজ ব্যাংক’কে একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনে রূপান্তরের প্রত্যয়ও জানিয়েছেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর