পিঠে ট্রান্সমিটার নিয়ে সুন্দরবনের নদীতে নামল জুলিয়েট-মধু
১৪ মার্চ ২০২৪ ১১:২১
মোংলা (বাগেরহাট): সুন্দরবনের নদীতে কুমিরের আচরণ এবং লবণ পানিতে এদের টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধি সংক্রান্ত তথ্য জানার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। আর সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে বন আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) সহায়তায় দুটি কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সেগুলোকে অবমুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবনের নদীতে। এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে জুলিয়েট ও মধু নামের দুটি কুমির।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে বন বিভাগ পশ্চিম সুন্দরবনের কুমির প্রজনন এলাকা হিসেবে খ্যাত ভদ্রা নদীতে অবমুক্ত করা হয় কুমির দুটি। কেবল বাংলাদেশ নয়, স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে কুমিরের গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ এশিয়া মহাদেশেই এই প্রথম।
বন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রান্সমিটারসহ যে দুটি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে পুরুষ কুমিরের নাম জুলিয়েট। এটি সুন্দরবনের করমজলে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজননকেন্দ্রের পুকুরে ছিল। অন্যদিকে স্ত্রী কুমির মধুকে সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগ ও আইইউসিএনের এই উদ্যোগে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার দুজন কুমির বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে জুলিয়েট ও মধুকে সুন্দরবনের ভদ্রা নদীতে অবমুক্ত করা হয়। গবেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে সুন্দরবনের নদীতে কুমিরের চলাচল ও অবমুক্ত করা কুমিরের বেঁচে থাকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য জানা যাবে।
কুমির দুটি অবমুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ নুরুল করিম, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের ডিএফও আবু নাসের মোহসিন হোসেন, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. সরোয়ার আলম, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও নির্মল কুমার পাল, মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান, শ্রীলঙ্কার কুমির বিশেষজ্ঞ রু সোমাইয়েরা, অস্ট্রেলিয়ার কুমির বিশেষজ্ঞ পল, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীরসহ অন্যরা।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের নদী-খালে ২০৬টির মতো কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে করমজল কেন্দ্রে কুমির আছে ১১২টি। অবমুক্ত করা কুমির দুটির মধ্যে জুলিয়েটের বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর, মধুর বয়স ১৩ বছর।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ প্রজাতি বাটাগুর বাসকার পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে অবমুক্ত করা হয় সুন্দরবন এলাকায়। মূলত প্রাণীর জীবনাচার সম্পর্কে গবেষণার অংশ হিসেবেই শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার যুক্ত করে দেওয়া হয়।
হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, এশিয়ায় এই প্রথম কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করা হলো। এর মাধ্যমে কুমিরের চলাফেরা ও যেসব কুমির নদীতে অবমুক্ত করা হয়, তাদেরর টিকে থাকার ব্যাপারে জানা যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবন এলাকাতেই প্রাকৃতিক পরিবেশে লোনা পানির কুমির দেখা যায়। তবে এই পরিবেশে লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন খুব একটা হচ্ছে না। আইইউসিএনের তালিকায় লোনা পানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০০ সালে সুন্দরবনের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে কুমির প্রজননকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।
সারাবাংলা/টিআর
কুমির কুমির নিয়ে গবেষণা বাগেরহাট সুন্দরবন স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার