Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জিরা আবাদে সাফল্য, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৭

কৃষক জহুরুল ইসলামের জিরার ক্ষেত, ইনসেটে গাছে জিরার ফলন। ছবি: সারাবাংলা

নওগাঁ: মসলাজাতীয় ফসল জিরা। বেশ দামি এই মসলার আবাদ দেশে নেই বললেই চলে। ফলে দেশে জিরার যে চাহিদা, তার প্রায় পুরোটাই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। নওগাঁর মাটিতে সেই জিরাই পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন জহুরুল ইসলাম বাদল। রীতিমতো জিরার বাম্পার ফলন হয়েছে তার ক্ষেতে। তার সেই সাফল্য আগ্রহী করে তুলেছে অন্য কৃষকদের। কৃষি বিভাগও দেশে জিরার আবাদ প্রসারের আশা করছে।

আধুনিক কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদলের বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামে। পাঁচ শতক জমিতে জিরা আবাদ করেছিলেন তিনি। সেই জমিতে এখন দুলছে পাকা জিরা। আর তার সুবাস ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। বাদলের নিজের ও আশপাশের গ্রাম তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকেও কৃষকরা দেখতে আসছেন তার জিরার ক্ষেত।

বিজ্ঞাপন

জহুরুল ইসলাম বাদল জানালেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দামি ও উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষ করে আসছেন তিনি। বাজারে জিরার দাম অনেক বেশি হওয়ায় সম্প্রতি তিনি জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন জহুরুল। কিন্তু দেশে তো জিরার বীজও পাওয়া যায় না। পরে ভারত থেকে জিরার বীজ সংগ্রহ করেন তিনি।

জহুরুল ইসলাম বাদল বলেন, অনলাইনে জিরার আবাদের পদ্ধতি দেখি মনোযোগ দিয়ে। মনে হয়, আমিও জিরা আবাদ করতে পারি। পরে ভারত থেকে বেগুনি ফুলের জাতের ৫০০ গ্রাম জিরার বীজ সংগ্রহ করি। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে পাঁচ শতক জমিতে জিরার বীজ বপন করি।

নওগাঁর এই কৃষক জানালেন, সরিষার আবাদ যেভাবে করা হয়, ঠিক সেভাবেই জিরার আবাদ করেছেন তিনি। একেকটি গাছে যতগুলো ফুল ছিল, ততগুলোই জিরা ধরেছে। বর্তমানে জিরা বেশ পরিপক্ক হয়েছে। পাঁচ শতক জমির আবাদে ১০ থেকে ১২ কেজি জিরা পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

জহুরুল বলেন, আমার জমিতে যে জিরা হয়েছে, এর স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। বাজারে যেসব জিরা পাওয়া যায়, তার চেয়ে অনেক ভালো জাতের জিরা এটি। এই জিরা আবাদে রোগবালাইয়ের উৎপাত নেই বললেই চলে। পানি বা সেচও দিতে হয় না। ফলে জিরা আবাদে খরচ কম। পরিশ্রমও কম। এত অল্প শ্রম ও খরচে এরকম একটি দামি মসলা চাষ করতে পারলে আর্থিকভাবে যথেষ্ট লাভবান হওয়া সম্ভব।

জহুরুল যে জিরা আবাদ করেছেন, সেটি মূলত শীতকালীন ফসল। বীজ বপন থেকে শুরু করে জিরা ঘরে তুলতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। প্রথম আবাদে সাফল্য পেয়ে জহুরুল আগামীতে আরও বেশি জমিতে জিরা আবাদের পরিকল্পনা করছেন।

জহুরুলের জিরা ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই জিরার আবাদ দেখতে গিয়েছেন সেখানে। তাদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যাই বেশি। জিরার আবাদ নিজ চোখে দেখে এ সম্পর্কে নানা তথ্য তারা সংগ্রহ করছেন জহুরুলের কাছ থেকে।

কেতমনই একজন সুলতান এসেছিলেন আত্রাই উপজেলা থেকে। তিনি বলেন, জিরার গাছ দেখতে এসেছি। আমিও চাষাবাদে আগ্রহী। আগামীতে জিরার চাষ করতে চাই।

জিরা আবাদে সাফল্য বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা হক বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে জিরা চাষে সফল হয়েছি। কৃষক জহুরুলের মাধ্যমে পুরো দেশের কৃষকদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে— খুব সহজেই আমাদের মাটিতে জিরার মতো দামি মসলাজাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব। এই জিরা চাষের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, সরিষার মতো করে জিরা চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া জিরা চাষে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ও সেচের প্রয়োজন হয় না বলে খরচও অনেক কম। নওগাঁয় জিরা চাষের এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে বলে আমি মনে করি।

কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ফারজানা হক বলেন, জিরা শুধু নয়, অন্যান্য নতুন দামি ফসল চাষেও যদি কেউ আগ্রহী থাকেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

সারাবাংলা/টিআর

কৃষি বিভাগ জিরা আবাদ জিরা চাষ জিরা চাষে সাফল্য নওগাঁ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর