Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীকে হেনস্তা: শাস্তির আগেই শিক্ষাবর্ষ শেষ অভিযুক্তদের

আজাহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট
১৫ মার্চ ২০২৪ ১৩:১০

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলে পছন্দের সিটে উঠাকে কেন্দ্র করে সায়মা রহমান দ্বন্দ্বে জড়ান হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী পপি খাতুনসহ কয়েকজনের সঙ্গে। এ কারণে সায়মা এবং তার বন্ধু ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজের বিরুদ্ধে পপিকে হেনন্তা করার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এদিকে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে র‌্যাগিংয়ের পাল্টা অভিযোগ করেন সায়মা। অভিযোগের প্রায় দেড় বছর পর জড়িতদের  শাস্তি হিসেবে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িত দুইজনেরই শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার ফলে শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ঘটনায় নামমাত্র তদন্ত ও ফাইল চাপা পড়ে থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এজন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহল।

গত ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সই এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগের স্নাতোকোত্তরের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পপি খাতুন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান হাফিজ কর্তৃক সৃষ্ট ঘটনা এবং একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সায়মা রহমানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুই ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া হলে ২০২২ সালে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অফিস আদেশে তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে পপি খাতুন ও মেহেদী হাসান হাফিজের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। পপি খাতুন ছাত্রজীবন শেষে ক্যাম্পাস ছাড়লেও হাফিজ বর্তমানেও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ৩২৪ নং কক্ষে অবস্থান করেন।

সাজা প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি এক দফতর অন্য দফতরের উপর দায় চাপাচ্ছেন। তদন্ত কমিটির দাবি তারা পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যার ফলে সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ নেই। এছাড়া ‘ফাইল চাপা’ পড়ার কারণে এমনটি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা। অন্যদিকে রেজিস্ট্রারের দাবি তদন্ত প্রতিবেদন জমায় গাফিলতি অথবা ‘প্রসিডিউর’ দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এমনটি হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত মেহেদী হাসান হাফিজ বলেন, ঘটনার পরপরই সাক্ষাৎকারের জন্য তদন্ত কমিটি থেকে আমাকে ডাকা হয়েছিল। গত দুইদিন আগে বিভাগের মাধ্যম হয়ে আমার কাছে সতকর্তামূলক একটি চিঠি এসছে।

এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মাহবুবা সিদ্দিকা বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের দুই মাসের মধ্যেই আমরা রিপোর্ট জমা দিয়েছি। প্রশাসন কেন ব্যাপারটা দীর্ঘ করল, সে ব্যাপারে আমি বলতে পারব না।

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা সাথী বলেন, দেরি হওয়ার কারণটা তদন্ত কমিটি, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি এবং রেজিস্ট্রার অফিস ভালো বলতে পারবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের প্রভোস্ট বলেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’ বলে একটা কথা আছে। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলে শাস্তির তো আর কার্যকারিতা থাকে না। তদন্ত প্রতিবেদন ঠিক সময়ে দিলেও অনেক সময় ফাইল চাপা পড়ে যায়। যার কারণে এই দেরি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘দুটো কারণে এমন হতে পারে। একটি হলো তদন্ত প্রতিবেদন দেরিতে জমা দেওয়া। তাছাড়া কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ছাত্র-শৃঙ্খলা, সিন্ডিকেটসহ অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। এজন্যও দেরি হতে পারে।’

জানা গেছে, ২০২২ সালে হলে পছন্দের সিটে উঠাকে কেন্দ্র করে সায়মা রহমান দ্বন্দ্বে জড়ান হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। পরে সায়মা বিষয়টি তার বিভাগের সিনিয়র ও ছাত্রলীগকর্মী মেহেদী হাসান হাফিজকে জানান। বিষয়টি হাফিজ জানার পর কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর দ্বারা হলের আবাসিক সিনিয়র শিক্ষার্থী পপি খাতুনকে হেনস্তা করেন। পরে ওইদিনই সন্ধ্যায় সায়মা ও হাফিজের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন আবাসিক ছাত্রীরা।

এছাড়া হলের দেড়শতাধিক ছাত্রীর সই করা অভিযোগপত্র ইবি প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়। অন্যদিকে সায়মা সিনিয়রদের দ্বারা র‌্যাগিং ও নির্যতনের অভিযোগ এনে প্রক্টর ও প্রভোস্ট বরাবর পাল্টা অভিযোগ করেন। পরে সায়মাকে হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং হল প্রশাসন ২টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করে। তবে সেই ছাত্রী কিছুদিন পরেই পুনরায় হলে ওঠেন এবং পছন্দের সিটেই থাকছেন বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/এআই/এনএস

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই । ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর