Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গুলশানে লেকের অবস্থা জাহান্নাম থেকেও খারাপ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪২

ঢাকা: এলাকার মলমূত্র সব ফেলায় গুলশান লেকের দূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। লেকের কিছু কিছু অংশ যেমন গুলশান জামে মসজিদের সামনে লেকে জাহান্নাম থেকেও খারাপ অবস্থা হয়ে আছে। আর দূষিত এই পানিতে মাছ তো চাষ হয়ই না, মশার চাষ হয় ফলে ওই এলাকায় মশা বেশি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও গুলশান সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে গুলশান লেক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মেয়র এসময় লেক পরিষ্কার না রাখার জন্য এলাকাবাসীর পয়োনিষ্কাশনের জন্য লেক ব্যবহার ও লেকের দায়িত্ব রাজউকের অধীনে রাখাকে দায়ী করেন।

বিজ্ঞাপন

মেয়র বলেন, ‘আমি চাই এই লেকগুলোতে শিশুরা খেলবে। ওয়াটার ট্যাক্সি চলবে। আরও আধুনিক যন্ত্র থাকবে যা দিয়ে তারা খেলবে। কিন্তু পানি হয়ে আছে শতভাগ দূষিত। এখানকার কোনো মানুষ এই লেক থেকে উপকৃত হচ্ছে না। এই এলাকায় অতিরিক্ত মশা, যা এই লেকগুলো থেকে হয়। গুলশান এলাকার মানুষের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই লেক পরিষ্কার করে দিচ্ছে।’

চিঠি দেওয়ার পরেও লেকের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘গুলশান লেক, বারিধারা লেক মূলত রাজউকের অধীনে আছে। তাদের আমি চিঠি দিয়েছি এগুলোকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে দিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু তারা আমাদের দেয়নি। গুলশান লেকের পাশেই গুলশান জামে মসজিদ। এই মসজিদের মুসুল্লিরা আমাকে বারবার জানিয়েছে লেকের দূষিত পানির দুর্গন্ধ মসজিদে আসে। গুলশান সোসাইটি, বারিধারা সোসাইটির নেতারা আমার কাছে গিয়েছে। তারা নিজেরা এই লেক পরিষ্কারে অংশ নিতে চায়। তাই হস্তান্তর করুক আর না করুক সেটি নিয়ে চিন্তা না করে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে জনগণকে নিয়ে লেক পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া পরিষ্কার অভিযানে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি গুলশান সোসাইটি, ৬টি স্কুলের শিক্ষার্থী, জাগো ফাউন্ডেশন ও শক্তি ফাউন্ডেশনের প্রায় ৪০০ জন অংশ নিয়েছেন। ৬টি স্কুল হলো স্যার জন উইলসন স্কুল, চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল, স্কলাস্টিকা স্কুল, দিল্লি পাবলিক স্কুল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং সানিডেল স্কুল।

সকাল সাড়ে নয়টায় গুলশান লেক পার্কে শিক্ষার্থী ও অতিথিরা মিলিত হয়। সেখানে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে সকাল ১০টায় গুলশান-৬৩ নম্বর রোডের গুলশান জামে মসজিদের পাশ থেকে লেক পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে মেয়র মো. আতিকুল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সশরীরে অংশ নেন।

নগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে একটা সোসাইটিকে সুন্দর করা সম্ভব না যতক্ষণ না এখানকার মানুষই এগিয়ে আসে। গুলশান, বনানী অভিজাত এলাকা। এখানকার একেকটি ফ্ল্যাট ২৫ কোটি, ৫০ কোটি টাকা মূল্যের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে এই এলাকার ভবনগুলো থেকে পয়ঃবর্জ্য সরাসরি এই লেকে এসে পড়ছে। ডিএনসিসির স্টর্ম ড্রেনের সাথে একটি চোরাই পাইপ সংযুক্ত করা হচ্ছে। অথচ এসব ড্রেন দিয়ে শুধু বৃষ্টির পানি যাওয়ার কথা। একটি ছোট ইটিপি প্ল্যান্ট মাত্র ৩ লাখ টাকা। এসব প্ল্যান্ট করতে রাস্তার নিচে যতটুকু জায়গা লাগে সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা করে দিবে। আমরা চাই শুধু সরকার না এলাকাবাসীও এগিয়ে আসুক।’

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।


প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা নাগরিকরা এবং পুরো সমাজের সবাই যদি একসঙ্গে একটা উদ্যোগ নেই, তাহলে সেটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটা একটা উদ্যোগের ব্যাপার। রাজউক, সিটি করপোরেশন, আমাদের সোসাইটি এবং ওয়াসাকে ডাকবো। একটা সমন্বয় করে কাজগুলো করতে হবে। এটা আমি করবো।’

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে আমি এই এলাকা থেকে দুইবার নির্বাচিত হয়েছি। আমার একটা প্রত্যাশা থাকবে শুধু লেকগুলো পরিষ্কার হবে তাই নয়; আগামী দিনেও যাতে লেকগুলো পরিষ্কার থাকে এবং যত্ন নেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা আমরা সবাই মিলে করবো।’

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অন্যদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান, অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নায়ন, গুলশান সোসাইটির সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

গুলশান গুলশান লেক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর