২৮ চ্যালেঞ্জে ঘুরপাক খাচ্ছে এডিপির বাস্তবায়ন
১৭ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৩
ঢাকা: ২৮ চ্যালেঞ্জে ঘুরপাক খাচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন। এর মধ্যে প্রকল্প তৈরি অনুমোদন পর্যায়ে ১১টি, বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১১টি এবং প্রকল্পের শেষে ৬টি চালেঞ্জ রয়েছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে প্রকল্পে কাজ। বাড়ছে মেয়াদ ও ব্যয়। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে সুপারিশ করা হয়েছে। ‘২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপির অগ্রগতি পর্যালোনা’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
আইএমইডি’র প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদন পর্যায়ে ১১টি চ্যালেঞ্জ হলো— প্রকল্প তৈরিতে দুর্বলতা, দক্ষতার অভাবে অন্য প্রকল্পের ছক অনুসরণ করে নতুন প্রকল্প তৈরি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকল্প প্রস্তাবে সরকারে বিভিন্ন পরিকল্পনা লক্ষ্য অর্জনের তথ্যে অপর্যাপ্ততা এবং প্রকল্প গ্রহণে সুবিধাভোগীদের মতামত না নেওয়া। এছাড়া প্রকল্প তৈরির সময় রেজাল্ট ফ্রেমওয়ার্ক ও লগফ্রেম ওয়ার্ক ঠিকভাবে না করা, প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত না করা, এমটিবিএফ’র আর্থিক সীমা অনুসরণ না করা এবং প্রকল্পের ফলাফল টেকসই করতে পরিকল্পনা সঠিকভাবে তৈরি না করা।
আরও আছে ভৌত কাজের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়, বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করেই প্রকল্প অনুমোদন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের দ্বৈততা থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ের ১১টি চ্যালেঞ্জ হলো— প্রকল্প প্রস্তাবে দেওয়া কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা, প্রকল্পের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা এবং তা পরিবীক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকা এবং মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা।
এছাড়া কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, নিয়মিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) ও পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) সভা না করা এবং কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্যাকেজের কাজ শেষ না করে বারবার সময় বৃদ্ধির আবেদন করা। আরও আছে ইউটিলিটি স্থানান্তরে দীর্ঘসূত্রতা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জটিলতা, পিইসি ও পিএসসি সভা ছাড়াই প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে বিলম্ব ও একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা। প্রকল্প এলাকায় পরিচালকের অবস্থান না করা এবং আইএমইডির সুপারিশ বাস্তবায়ন বা ফলোআপ না করা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন পরবর্তী পর্যায়ের ৬টি চ্যালেঞ্জ হলো— প্রকল্প শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পিসিআর (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) না দেওয়া, তুলনামূলক আর্থিক বা অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ না করা এবং পিসিআর মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ফিডব্যাক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইএমইডি’কে অবহিত না করা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রম প্রকল্প শেষে পরিচালনা করার জন্য রাজস্ব বাজেটের অপ্রতুলতা, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল স্থায়ী করতে কোনো ব্যবস্থা না করা এবং প্রকল্প শেষে এর যানবাহন নির্ধারিত সময়ে সরকারি পরিবহন পুলে জমা না দেওয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকার হালনাগাদ সংস্করণ ২০২২ সালের জুনে প্রকাশ করা হয়েছে। ওই নির্দেশিকায় প্রকল্প তৈরির সময় বিবেচনার জন্য বিভিন্ন বিষয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবাবয়ন ও পরিবীক্ষণে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আইএমইডি প্রকল্পের বাস্তবায়ন, দীর্ঘ সময় লাগা এবং প্রাক্কলিত ব্যয় অতিক্রান্ত হওয়ার কারণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে।
এ বিষয়ে আইএমইডি’র সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা শুধু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেই দায়িত্ব শেষ করিনি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেসব বিষয়ও তুলে ধরেছি প্রতিবেদনে। ইতোমধ্যেই প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করছি আগামীতে এটি আর চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না।
একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর একটি অন্যতম বাধা হলো ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। এটিও সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাকি সমস্যাগুলোরও সমাধান করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।
সারাবাংলা/জেজে/ইআ/এনএস