জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে শ্রদ্ধায় স্মরণ
১৭ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আপামর মানুষ। সভা, সমাবেশসহ নানা আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এ মহানায়ককে।
রোববার (১৭ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও সরকারিভাবে ঘোষিত শিশু দিবস উপলক্ষে নগরীর টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও শিশু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না’ মন্তব্য করে সভায় চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণত হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিতে। তার জন্ম না হলে এ জাতিকে এক করে যুদ্ধের ময়দানে নেওয়া যেতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্মের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনার জন্ম বাস্তবে রূপায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ, যাতে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করে এ দেশটির স্বাধীনতা এসেছে।’
শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে লালনের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এখনকার শিশুরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। তোমাদের নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। তোমাদের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত লড়াই সম্পন্ন হবে, গড়ে উঠবে স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা।’
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, জহরলাল হাজারি, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আতাউল্লা চৌধুরী, গোলাম মো. জোবায়ের, নুরুল আমিন, আনজুমান আরা ও রুমকি সেনগুপ্ত।
সভার শেষে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা, সিএমপির কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস দু’টি আমরা আজ একসঙ্গে পালন করছি। একটি সময় এমন অবস্থা ছিল ইতিহাস ও পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ কারণে বঙ্গবন্ধুকে সঠিক ভাবে মূল্যয়ন করার সুযোগ এ প্রজম্মের অনেকেই পায়নি।’
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালির ইতিহাসের প্রবাদ পুরুষ। আমাদের চেতনার অগ্নিপুরুষ। তিনি শুধু পরাধীন জাতিকে স্বাধীন করেছেন তাই নয়, তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ ক্ষণজম্মা পুরুষের চরিত্রে ছিল বিদ্রোহী স্বত্তা, হৃদয়ে ছিল দূর্জয় সাহস। তিনি ছিলেন গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পথ প্রদর্শক।’
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার পরপর প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। সেগুলোকে তিনি সরকারি করেছিলেন। তার এ তিন বছরের কার্যকালে ১১ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা ছিল না। কিন্তু ওই শিক্ষকদের বেতন তিনি বন্ধ রাখেননি।’
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের যদি আমরা গড়তে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজম্ম তৈরি হবে না। বঙ্গবন্ধু এতই দূরদর্শী ছিলেন যে তিনি ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রবর্তন করেন। শিশু আইন প্রবর্তন করে কিছু নতুন বিভাগ তিনি চালু করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, শিশু হাসপাতাল এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৯৭৪ সালে তিনি স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ছিল।’
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কর্মকর্তারা। এসময় শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে।
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বন্দর ভবন প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে এসময় শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) হাবিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাদী হোসেন বাবুল বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আইসি/এমও