কসাইদের ‘বিদ্রোহে’ ৬ দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রাঙ্গামাটিতে
১৭ মার্চ ২০২৪ ২৩:০০
রাঙ্গামাটি: রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে এক সপ্তাহ আগে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক থেকে খুচরা পর্যায়ে ৭০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত দিয়েছিল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি কসাই ও মাংস ব্যবসায়ীরা। এর প্রতিবাদ হিসেবে প্রথম রমজান থেকেই গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তারা।
ভোক্তারা বলছেন, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকেই তারা রাঙ্গামাটি শহরে গরুর মাংস কিনতে পারছেন না। আজ রোববার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত কসাই ও ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রি করেননি। রমজানে শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁর বড় একটি অংশ বন্ধ থাকায় মাংসের চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও সাধারণ ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। জেলা শহরে বন্ধ থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে অবশ্য গরুর মাংস বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (১১ মার্চ) রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাঙ্গামাটি জেলায় ৭০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
পরদিন মঙ্গলবার থেকেই রাঙ্গামাটি জেলা শহরের বনরূপা, রিজার্ভ বাজারসহ অন্যান্য বাজারে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেন কসাই-ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে লাভ হবে না। ছয় দিন ধরে তাই তারা মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাঙ্গামাটি জেলা শহরে যেসব গরুর মাংস বিক্রি করা হয়, এসব গরুর বেশির ভাগই আনা হয় জেলার বিভিন্ন উপজেলা, বিশেষ করে লংগদু উপজেলা থেকে। নৌ পথে গরু পরিবহণের কারণে পরিবহণসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বেশি পড়ে। এতে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকার নিচে কসাই ও ব্যবসায়ীদের গরুর মাংস বিক্রির সুযোগ কম।
জেলা শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা মো. হারুন সওদাগর বলেন, ‘বেশি দামে গরু কিনে লোকসানে মাংস বিক্রি সম্ভব নয়। প্রশাসন যে দামে গরুর মাংস বিক্রির জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে বিক্রি করলে আমাদের অনেক লোকসান হবে। তবুও আমরা প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রির অনুমতি চেয়েছিলাম।’
বনরূপা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. জাফর বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা থেকে গরু কিনেও লংগদুর মাইনীমুখ বাজারে প্রতি গরুর জন্য দেড় হাজার টাকা ইজারার হাসিল ও পথে বিভিন্ন গ্রুপকে চাঁদা দিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে আনতে হয়। ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
রাঙ্গামাটি পৌরসভার বাজার পরিদর্শক কামাল তালুকদারও গত মঙ্গলবার তথা প্রথম রমজান থেকেই রাঙ্গামাটি শহরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কারণে কসাইরা গরুর মাংস বিক্রয় করছেন না, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
জানতে চাইলে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া মূল্য অনুযায়ী প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬৬৪ টাকায় বিক্রি করতে বলা হয়েছে। তবু রাঙ্গামাটির বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আমরা ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বলেছি। জেলার অন্যান্য উপজেলা ও পাশের জেলাতেও সরকার নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে কেবল রাঙ্গামাটি সদরের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে চাইছে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের না পোষালে তো খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। গরুর মাংস তো নিত্যপণ্যও না যে প্রতিদিন কিনতে হবে, খেতেই হবে। তারা এভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করলে মানুষ কদিন পরে নিজেরাই পাড়া-এলাকায় গরু জবাই করে ভাগাভাগি করে নেবেন।’
সারাবাংলা/টিআর
কসাই গরু ব্যবসায়ী গরুর মাংস গরুর মাংস বিক্রি জেলা প্রশাসন টপ নিউজ টাস্কফোর্স নিত্যপণ্য রাঙ্গামাটি