ঈদের কেনাকাটা: বিক্রি শুরুর অপেক্ষায় বিক্রেতারা
১৮ মার্চ ২০২৪ ১১:৫৫
ঢাকা: রমজানের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর মিরপুরের বিপণিবিতানগুলো ঈদের পর্যাপ্ত পোশাকে উঠলেও এখনও বেচা-কেনা সেভাবে শুরু হয়নি। শপিংমলের ছোট-বড় দোকানগুলোতে কিছু কিছু ক্রেতা এলেও তাদের বেশিরভাগই পছন্দের পোশাক দেখতে আসছেন। বিক্রেতারা বলছেন, চলতি বছর সব ধরনের পোশাকের দাম বেড়েছে। ক্রেতা কম হওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে। তাদের আশা, রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈদ বাজারের কেনাকাটায় বিপণিবিতানগুলো সরগরম হয়ে উঠবে।
সরেজমিনে রোববার (১৭ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি শপিং সেন্টার, বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও পোশাকের শো রুম ঘুরে এসব জানা গেছে।
এদিন দুপুরে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থিত শাহ আলী প্লাজায় ‘এস কে ফ্যাশনে’র বিক্রেতা রায়হান মো. সুজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষ হতে চললেও অন্য বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা সেভাবে নেই। বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মানুষ সবার আগে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে তারপর আনন্দের অনুষঙ্গ হিসেবে ঈদে পছন্দের পোশাক কিনে। কিন্তু এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। পোশাকের দামও অনেক বেড়েছে। এসব কারণেও এবার হয়ত ঈদের পোশাকের বাজারে ক্রেতা কম। তারপরও আগামী সপ্তাহ থেকে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা করছি।’
একই শপিং সেন্টারে রেহানা আক্তার নামে এক ক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কাজীপাড়ায় থাকি। রমজানের ১০ দিন পর থেকে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সবাই গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় চলে যাব। এ কারণে মার্কেটে ভিড় কম থাকা অবস্থায় আগেভাবে বাচ্চাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে এসেছি।’
শাহ আলী প্লাজার নাহার এন এক্সক্লোসিভ ফ্যাশনের বিক্রেতা বাবলু মিয়া বলেন, ‘বেচাকেনা হচ্ছে, তবে তা অনেক কম। রেগুলার বেচাকেনা। ঈদের বেচাকেনা সেই অর্থে শুরু হয়নি।’ আগামী সপ্তাহ থেকে বেচাকেনা বাড়তে পারে এমন প্রত্যাশার কথা বলেন তিনি।
দুপুরের পর মিরপুরের এফ এস স্কয়ার শপিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মার্কেটই প্রায় ফাঁকা। শপিংমলের ছোট-বড় অনেক দোকানে নানা ধরনের মূল্য ছাড়ের নোটিশ টাঙানো থাকতেও দেখা গেছে। সেখানে লেদার ফুটওয়ারের বিক্রেতা রাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেচাকেনা সেভাবে হচ্ছে না। ১৫ শতাংশ মূল্য ছাড়ে বিক্রি চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই শপিং সেন্টারটি নতুন হওয়ার কাস্টমারদের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়, কাস্টমার কম থাকার এটাও একটা কারণ হতে পারে। পুরো মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানই প্রায় কাস্টমার শূন্য থাকতে দেখা গেছে।’
শপিং সেন্টারের নিচ তলায় জাহাঙ্গীর আলম নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে এসে এপেক্স শো রুমসহ আরও কয়েকটি জুতোর দোকান ঘুরে দেখেছি। আজ দেখে গেলাম আগামী সপ্তাহে যদি বোনাস পাই তাহলে এখানে জুতো কিনতে আসব। পুরো মার্কেট এখন ফাঁকা। এখন যারা কিনতে আসবে তারা অনেক দোকান ঘুরে যাচাই-বাছাই করে কিনতে পারবো।’
এদিন বিকেলে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১ নম্বরে যেতে রাস্তার বাম পাশে ফুটপাতে শত শত দোকানিকে ঈদের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে। তবে অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সরগরম উপস্থিতি থাকে। এবার বিক্রেতাদের হাঁকডাক থাকলেও ক্রেতা কম।
সড়কের পাশে ছোট বাচ্চাদের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা ফয়েজ নামের এক বিক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার এখনও ঈদের বেচাকেনা সেভাবে শুরু হয়নি। আমরা পর্যাপ্ত পণ্য দোকানে তুলেছি, তবে বেচাকেনা কম। রোজার মাঝামাঝি থেকে ক্রেতা বাড়তে পারে।’
একই এলাকার মিরপুর শপিং সেন্টারে গিয়ে একই চিত্র চোখে পড়েছে। তবে বাচ্চাদের কিছু দোকানে ক্রেতাদের ভালো উপস্থিতিও দেখা গেছে।
মিরপুর শপিং সেন্টারের ‘টুকটুকি শপ’ নামের বাচ্চাদের একটি পোশাকের দোকানে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। সেই শপের বিক্রেতা আতিক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমরা বাচ্চাদের সব ধরনের পোশাক এনেছি। বেচাকেনাও মোটামুটি হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ কাস্টমার ঘুরে ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্রি আরও বাড়বে।’
একই শপিং সেন্টারে ঈদের পোশাক কিনতে আসা আনোয়ারা নামের এক গৃহিনী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেটে এসেছি ঈদের পোশাকের কালেকশন দেখতে। এবার কেমন পোশাক এসেছে তা দেখতে এসেছি। আরও কয়েকদিন পর কিনতে আসব।’
এবার রাজধানীর বিভিন্ন শপিং সেন্টারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে নানা ডিজাইনের পোশাক তারা এনেছেন। কিন্তু বেচাকেনা স্বাভাবিক সময়ের মতোই হচ্ছে। ঈদ বাজারের আমেজ এখনো শুরু হয়নি। তাদের আশা রোজার মাঝামাঝি থেকে বেচাকেনা বাড়বে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও