একীভূত হচ্ছে বিভক্ত জাপা, চলছে প্রাথমিক আলোচনা
১৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩২
ঢাকা: ছয় ভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টিকে (জাপা) একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাপা (কাদের)। রওশন এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাপা থেকে কিছু নেতা-কর্মীদের মূল দলে টানতে রাজি আছেন জিএম কাদের। রওশন গ্রুপের নেতারাও মূল দলে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। জাপা (কাদের) ও বিভক্ত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জাপার (কাদের) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে এ বিষয় কথা হলে তিনি জানান, মূল দল থেকে চলে গিয়ে যারা জাতীয় পার্টির নামে দল করেছেন তাদের হেভিওয়েট নেতারা মূল দলে ফিরে আসতে চাচ্ছেন। মূল দলে ফিরলে তারা তাদের বর্তমান রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করবে কিনা তা জানি না।
তিনি আরও জানান, মূল দলে থেকে চলে যাওয়া হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এ বিষয়টি ঈদের পরে চূড়ান্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা টেলিফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জেপির (মঞ্জু) এক নেতা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পরাজিত হওয়ার পর জেপির অবস্থা খুবই খারাপ। দলটির বেশ কিছু নেতা মূল দলে (জাপা কাদের) ফিরে যেতে ইচ্ছুক। ইতোমধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে মূল দলের নেতাদের সঙ্গে জেপির নেতাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। জেপি থেকে হেভিওয়েট নেতারা মূল দলে ফিরলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে জেপি বিলুপ্তি করতে হবে। সম্ভবত তিনি তা করতে পারেন। কেননা, তার স্বাস্থ্যসহ সার্বিক বিষয় চিন্তা করলে রাজনৈতিক মাঠে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর অবস্থা নাজুক।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নেতৃত্বাধীন দলের মহাসচিব শেখ শহিদ বলেন, বিচ্ছিন্ন দল একীভূত হলে জাতীয় পার্টি খুবই শক্তিশালী হবে। মূল দলে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক আলোচনা চলছে।
জেপির অতিরিক্ত মহাসচিব সাদেক সিদ্দিকী বলেন, মূল দল জাতীয় পার্টিতে নেতাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে ১৭ বছর মন্ত্রী এবং একবার সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক এগারোর সময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।
তিনি জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতা, যা বাংলাদেশে জেপি নামে পরিচিত। তিনি ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দেন এবং সেসময় সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি শপথবাক্য পাঠ করেন। পিরোজপুর ২ আসন থেকে ছয়বারের (১৯৮৬,১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪) সংসদ সদস্য তিনি।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. মতিনের নেতৃত্বাধীন জাপা নেতারা মূল দল জাতীয় পার্টিতে যোগদানের জন্য প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছেন বলে জানান জাপা (কাদের) গ্রুপের নেতারা।
এম এ মতিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সদস্য ছিলেন। তিনি শাহজাদপুর থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি প্রথমে জিয়াউর রহমান ও পরে এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। দুই সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, যুব ও ক্রীড়া, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি তৎকালীন পাবনা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় ও ১৯৮৮ ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিরাজগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অংশ নেয়। দলের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একাংশকে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ জাতীয় পার্টি নামেই নতুন দল গঠন করেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে এ দলটি যোগ দেয়।
কাজী জাফর আহমেদের মৃত্যুর পর এ দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হিসেবে যথাক্রমে টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী ও মোস্তফা জামাল হায়দার দায়িত্ব পালন করেন। ফজলে রাব্বি চৌধুরীর মৃত্যুর পর এ দলটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন মোস্তফা জামাল হায়দার ও নওয়াব আলী আব্বাস।
এই দলের নেতা আহসান হাবিব লিংকন বলেন, মূল দলে ফিরে যাওয়ার আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত কোনো কিছুই হয়নি। আমরা কমিটমেন্ট চাই, জাতীয় পার্টি যেন লেজুড়বৃত্তি এবং দালালী রাজনীতি না করে। আমরা চাই জাতীয় পার্টি তার নিজস্ব রাজনীতি এবং সত্তা নিয়ে পথ চলবে।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বে আরও এক দফা বিভক্ত হয়ে যায় জাতীয় পার্টি। গত ৯ মার্চ রওশনপন্থিদের কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব নির্বাচন করা হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আইই
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি জিএম কাদের মজিবুল হক চুন্নু রওশন এরশাদ