রাজশাহীর বাজার: নির্ধারিত দামে মিলছে না ২৯ পণ্যের কোনোটিই
১৯ মার্চ ২০২৪ ১০:২৪
রাজশাহী: নিত্যপণ্যের বাজার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়া পণ্যের দাম লাগামছাড়া। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রোজায় বাড়তি চাহিদা থাকা২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। তবে রাজশাহীর বাজারে এই নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন নেই। ২৯টি পণ্যের কোনোটিই পাওয়া যাচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দামে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। ফলে তাদের পক্ষেও নির্ধারিত দাম রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ না মেনে ব্যবসায়ীরা যে সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যের বাড়তি দাম রাখছেন, তাদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগের বছরগুলোর মতোই এ বছরও রমজান শুরুর আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। প্রথম রমজানে প্রায় সব পণ্যসহ বিশেষ করে ইফতারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এর মধ্যে সরকারের নানা পর্যায় থেকে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের বলা হলেও তা কাজে আসেনি। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) মাছ-মাংসসহ ২৯ পণ্যের খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদফতর।
আরও পড়ুন- গরু ৬৬৪, ব্রয়লার ১৭৫ টাকা— ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দিলো সরকার
রোববার (১৭ মার্চ) ও সোমবার (১৮ মার্চ) রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি বিপণন অধিদফতরের এই নির্দেশনার কোনো প্রভাবই নেই। খুচরা বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৯৮ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা থাকলেও রাজশাহীর বাজারে ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ১৩০ টাকার জায়গায় মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ৯৩ টাকার জায়গায় খেসারি ডাল ১৩০ টাকা এবং ১৬৫ টাকার জায়গায় মুগডাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি জাহিদি খেজুরের দাম সরকার ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করলেও রাজশাহীতে সবচেয়ে কম দামি খেজুরও প্রতি কেজি রাখা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকায়। চিড়ার খুচরা দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা ও বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদফতর। বাজারে চিড়ার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেসন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা।
সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও সিম ৫০ টাকা এবং আলুর কেজি সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। প্রতি কেজি টমেটোর খুচরা মূল্য ৪০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়ার দাম ২৪ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে রাজশাহীর বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে, বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, বেগুন ও শিমের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটোর কেজি ৫০ টাকা। আর মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম সরকার নির্ধারণ করেছে ৬৬৪ টাকা, ছাগলের মাংসের দাম এক হাজার তিন টাকা। তবে নির্ধারিত দামে মিলছে না এসব মাংসও। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে।
রাজশাহী নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসেছিলেন মাসুদ রানা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। আগে বাজারে দাম কমলে প্রভাব পড়ত না, এখনো পড়েনি। সরকার দাম বাড়ালে অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে দাম বেড়ে যেত। আমরা সাধারণ মানুষ। অল্প আয় করি। এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুব হিমশিম খাচ্ছি।’
সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সরকার যদি বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। এ জন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
বেশি দাম প্রসঙ্গে ফলবিক্রেতা মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে দামে কিনছি সেই অনুপাতেই বিক্রি করছি। শুক্রবার পেয়ারা কিনেছি ৭০ টাকায়। বিক্রি করেছি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আবার শনিবার ৬০ টাকা কেজি কিনে ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছি।’
নগরীর সাহেববাজারে মাংস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘গরু কিনতে যে টাকা লাগে সেই অনুপাতে আমরা বিক্রি করছি। কেজি প্রতি ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দাম তো বাড়তি, আমরা কী করব? সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করা অসম্ভব।’
সরকার নির্ধারিত মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ মাছের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব মাছের কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা বাজারে। বাস্তবে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা আর সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজার। এ ছাড়া প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে গেলে আরও বেশিই গুনতে হচ্ছে দাম।
জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফরিন হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, শনিবার থেকেই সবাইকে এই দামে পণ্য বিক্রি করতে বলা হয়েছে। আমরা অভিযানে নামব। আমাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরও থাকবে। যারা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর সরকারি ছুটি থাকায় সেদিন কোনো অভিযান চলেনি রাজশাহীতে। গতকাল সোমবার কর্মদিবস থাকলেও অভিযান দেখা যায়নি কোনো বাজারেই। কৃষি বিপণন অধিদফতর বলছে, আজ মঙ্গলবার থেকে অভিযান চালানো হবে। ক্রেতারাও দ্রুতই অভিযান চালিয়ে নিত্যপণ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন।
সারাবাংলা/টিআর
অভিযান কৃষি বিপণন অধিদফতর নিত্যপণ্য নিত্যপণ্যের দাম বাজার পরিদর্শন বাজার মনিটরিং বাজারদর বাজারে অভিযান রাজশাহী সরকারের দাম নির্ধারণ