চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ ওই বন্দি আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। কারা কর্তৃপক্ষের ভাষায়, আত্মহত্যার ‘অপচেষ্টারত’ অবস্থায় তাকে উদ্ধারের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত ইব্রাহীম নেওয়াজ (৩০) রাঙামাটি পৌর সদরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি গত ছয় মাস ধরে কারাগারে ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ও জেলার মো. এমরানকে বেশ কয়েকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে জেলারের পক্ষ থেকে একজন কারা কর্মকর্তা ফোন করে সারাবাংলাকে এ বিষয়ে তথ্য দেন।
ওই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যায় কারাভ্যন্তরে তালাবন্দি করার সময় বন্দি গণনা করতে গিয়ে একজন কম পাওয়া যায়। খোঁজাখুঁজির পর তাকে কারাগারের খাদ্য গুদামের সামনে চৌবাচ্চার টিনশেডের রডের সঙ্গে প্লাস্টিকের বস্তা ও কম্বলের বর্ডারের অংশ দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা দায়ের করেছে। এতে ‘সাজাপ্রাপ্ত বন্দি মৃত্যুর’ বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার অপচেষ্টারত অবস্থায় বন্দিকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে কারা হাসপাতালের সহকারি সার্জনের পরামর্শে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে ‘ফাঁসিতে ঝুলে’ মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ওবায়দুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারাগারের অভ্যন্তরে একজন বন্দি আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে থানায় একটি অপমত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।’
সিনিয়র জেল সুপারের প্রতিবেদনে বন্দির বিষয়ে আরও উল্লেখ আছে, রাউজান থানার একটি মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ইব্রাহীম নেওয়াজ। চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাজা পরোয়ানামূলে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি।
এদিকে কারা অভ্যন্তরে বন্দির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) টিপু সুলতানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।
ডিআইজি-প্রিজন টিপু সুলতান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারাগারে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। আমাকে প্রধান করে বিভাগের আরও তিন জেলা কারাগারের তিন জেল সুপারকে এতে সদস্য করা হয়েছে। তদন্ত শেষের সময়সীমা অবশ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।’