জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ, একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ১৩৪ রোগী
২০ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১
জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। গত পাঁচ দিন থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় দুই শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু রোগী জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ১৩৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে মেঝে ও করিডোরে শুয়ে বসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। রোগী এবং স্বজনদের ভিড়ে পা ফেলানোর জায়গা নেই হাসপাতালে। শুষ্ক মৌসুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, শুধু জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালেই গত পাঁচ দিনে প্রতিদিনই ৪৫ থেকে ৫০ জন ডায়ারিয়ার রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতাল, বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্ক।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ থেকে থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গত সোমবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত আধুনিক জেলা হাসপাতালে প্রায় ১৫ জন শিশু ভর্তি ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ৭-৮ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তারা সুস্থ হাসপাতাল ছাড়ছেন।
গত পাঁচ দিন থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে হাসপাতালের বেডে, মেঝেতে ও বারান্দ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসব রোগীরা প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথায় ভুগছেন। আর শিশুরা সাধারণত বমি, পাতলা পায়খানা ও পেটের ব্যথায় ভুগছে। অবস্থা সংকটাপূর্ণ ভেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শহরের আরাফাত নগর মহল্লার ৪ বছরের শিশু আরজা, পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের মুরছালিন জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। তাদের অভিভাবক জানান, তারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত পাঁচদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের এলাকার অনেক শিশুরাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
সদর উপজেলার হানাইল গ্রামের জাকির হেসেন বলেন, হঠৎ ইফতারের পর তার স্ত্রীর পেট ব্যথার পাশাপাশি বমি শরু হয়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে আমি নিজেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই। হাসপাতালের পরিবেশ খুব খারাপ। মেঝেতে পা রাখার জায়গা নেই, রোগীদের অনেক চাপ।
জয়পুরহাট পৌর সভার মুসলিম নগরের গোলাম আজম বলেন, ‘প্রথমে পেট ব্যথা তারপর পায়খানা শুরু হয়। সেহরির সময় যখন পানি পান করি পানিটা ঘোলা ছিল। আমার ধারণা পৌর পৌরসভার পানির কারণে এই ডায়রিয়া হতে পারে।’
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বলে ধারণা করছি। শহরে রাস্তার কাজ চলছে। পানির লাইন ফেটে যাওয়ার কারণে সাপ্লাইয়ের পানি দূষিত হয়ে এই সমস্যা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের রোগীদের সংখ্যাটা বেশি। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ২০০ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’
সারাবাংলা/এসকে/এনএস