প্রথম ৮ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৩১.১৭%, ১৪ বছরে সর্বনিম্ন
২০ মার্চ ২০২৪ ২১:৩০
ঢাকা: চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত ১৪ বছরের মধ্যে এটিই অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের হার। সে হিসাবে অর্থবছরের বাকি চার মাসে বরাদ্দের বাকি ৬৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জও থাকছে সরকারের সামনে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রথম আট মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বুধবার (২০ মার্চ) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশির ভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না। বাস্তবায়ন হারের এমন বেহাল দশায় অর্থবছর শেষে এডিপি লক্ষ্য পূরণে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৩৯২টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। প্রথম আট মাসে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার ৬০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
হিসাব বলছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গত ১৪ বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরেই এডিপি বাস্তবায়নের হার সবচেয়ে কম। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরেও এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল কম। সে বছরও বাস্তবায়ন ছিল এ অর্থবছরের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি।
বিভিন্ন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম আট মাসে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। সেই সময় এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মোট বরাদ্দের ৪৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই হার ছিল ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৩৮ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ ও ২০২০-২১ সালের প্রথম আট মাসে এডিপির বাস্তবায়ন ছিল ৩২ শতাংশের বেশি। অন্য বছরগুলোতেও একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৭ শতাংশের বেশি।
এদিকে চলতি অর্থবছরের আট মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের হার কমলেও ফেব্রুয়ারি মাসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১১ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই মাসে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা ছিল বরাদ্দের ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে আইএমইডি। বিভাগটি বাস্তবায়ন করেছে ৯৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৭৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৭১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৭০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
অন্যদিকে অর্থবছরের আট মাস পার হলেও বরাদ্দের ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। বিভাগটির ছয়টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ৩১৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আট মাসে তারা খরচ করেছে মাত্র ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ৭ শতাংশ। সে হিসাবে এই বিভাগকে অর্থবছরের মাত্র চার মাসে এডিপির ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ ছাড়া এডিপির ৩০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এডিপিতে তাদের জন্য বরাদ্দ ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকার মধ্যে আট মাসে খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৭৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এরপরেই আছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। আট মাসে তাদের বাস্তবায়ন মাত্র ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে খরচ করেছে ১৭ হাজার ৭৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৪৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম খরচ করেছে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়। তাদের খরচ ২৪ লাখ টাকা, যদিও তাদের জন্য এডিপিতে বরাদ্দও অনেক কম— মাত্র এক কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর