‘বায়ু ও পানি দূষণরোধে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে সরকার’
২০ মার্চ ২০২৪ ২৩:২৯
ঢাকা: সরকার পরিবেশ দূষণরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয়।
তিনি বলেন, বিশেষ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বায়ুদূষণসহ সার্বিক পরিবেশ দূষণরোধে ব্যাপক কাজ করছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সরকার পরিবেশ দূষণ ও বায়ুদূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। সাময়িক নয়, বরং সরকার স্থায়ী সমাধানের দিকে নজর দেবে।
সুইজারল্যান্ডের বায়ুমান পর্যবেক্ষণবিষয়ক সংস্থা আইকিউএয়ার প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩’-এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২০ মার্চ) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে আয়োজিত এক অংশীজন শুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বায়ুদূষণ নির্মূল ও নিঃশ্বাসের জন্য সতেজ বায়ু নিশ্চিত করার মাধ্যমে বয়স্ক ও শিশুদের জীবন রক্ষা শীর্ষক ওই অংশীজন শুনানির আয়োজন করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং শিশু ও যুব ফোরাম।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩ প্রকাশ করে আইকিউএয়ার। এই তালিকায় এবারে বাংলাদেশ বায়ুদূষণে শীর্ষ দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। আগের বছরও এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বাতাসে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র কণা পিএম২.৫-এর গড় ঘনত্ব ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত গ্রহণযোগ্য মাত্রার প্রায় ১৬ গুণ।
অনুষ্ঠানে তানভীর শাকিল জয় বলেন, কেবল পানি ছিটিয়ে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। এটি সাময়িক সমাধান। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের বায়ুদূষণের উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। বর্জ্য পুড়িয়ে যেন বায়ুদূষণ না হয় সেজন্য বর্জকে সম্পদে পরিণত করতে হবে, যার আর্থিক মূল্য থাকবে। ফলে মূল্যবান বর্জ্য কেউ পুড়িয়ে লোকসান করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উল্লেখ করে বলেন, নির্মল বায়ু মানুষের অধিকার। কিন্তু ঢাকা শহরের অধিবাসীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত। জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে সবার জন্য নির্মল বায়ু ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দার আলী (যুগ্ম সচিব) বলেন, বায়ুদূষণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আরও জোরালো করতে হবে। বায়ুদূষণ রোধের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দ সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তার ধুলাদূষণ কমাতে প্রতিদিন ২০টি গাড়ি রাস্তায় পানি ছিটানোর কাজ করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা বলেন, আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, যেন মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল না করতে পারে, যেগুলো বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে কাজ করার জন্য বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ কাজ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়েও বায়ুদূষণ রোধে কাজ করতে হবে। বসতবাড়ি ও কর্মস্থলের বর্জ্য সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে নিষ্কাশন করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ের উদ্যোগগুলো সরকারি কাজকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। আমরা সবাই কাজ করব, কিন্তু নেতৃত্ব দেবে সরকার।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, দূষণমুক্ত জীবন নাগরিক অধিকার। সংবিধানের ১৮-ক ধারায় এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণরোধে সরকারের পর্যাপ্ত আইন ও বিধিমালা রয়েছে। সেগুলো মান্য করা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। সরকারের পক্ষে প্রতিজনকে ধরে ধরে আইন মান্য করানো সম্ভব নয়। জনগণকে নিজ উদ্যোগে এসব আইন সম্পর্কে জানতে হবে এবং মেনে চলতে হবে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর, ফিল্ড প্রোগ্রাম অপারেশন মঞ্জু মারীয়া পালমা বলেন, বায়ুদূষণের ভুক্তভোগী আমরা সবাই। তাই সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ সমমনা সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানের আরও উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা ইসলাম ও হুমায়ুন কবির, ক্যাপসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মারজিয়াত রহমান, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার আরবান প্রোগ্রাম জোয়ানা ডি’রোজারিও, ডা. সন্তোস কুমার দত্ত, ডমিনিক সেন্টু গোমেজ, মীর রেজাউল করিম, মানস বিশ্বাস, জোনাস ক্লেরি কস্তা, শিশু ও যুব ফোরামের সদস্যসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর