Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গায়েবি জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত— ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ মার্চ ২০২৪ ২১:৫২

ঢাকা: মাদক মামলায় আদালত কোনো আদেশ না দিলেও ‘আসামির জামিন হয়েছে’ মর্মে নোট দেওয়ায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সাইফুদ্দিন খালেদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ঈদুল ফিতরের পর তাকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।—

কক্সবাজারের মাদকের মামলায় হাইকোর্টে জামিন চান মো. এমরান নামে এক আসামি। ১১ মার্চ আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ছিল। যদিও ওই আবেদনের ওপর সেদিন শুনানি ও আদেশ হয়নি। তারপরও ‘আসামির জামিন হয়েছে’ মর্মে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোট দেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।

ওই নোটের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গায়েবি’ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন।

বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আসে। সবশেষ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরের বিরতির পর এজলাসে আসেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন। এজলাসে আসন গ্রহণের পর ডায়াসে ডেকে নেন ওই আইন কর্মকর্তাকে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদের উদ্দেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ইমরান বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় আমরা তো আসামিকে জামিন দিইনি। অথচ আপিল বিভাগ থেকে জামিন আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে কীভাবে আপনি এত বড় ভুল তথ্য দিলেন। এই কর্মকাণ্ডের জন্য আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। আপনি যেভাবে নোট দিয়েছেন, সেভাবে পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়েছে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো দায় দেখছি না।’

এ সময় সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘কার্যতালিকার আগের মামলার জামিন আদেশের বিষয়টি ভুল করে এই মামলায় মার্ক করেছি। এ কারণে আমার এই ভুল হয়েছে।’ পরে বিচারপতি নজরুল ইসলাম বলেন, যে আদেশ দেয়নি সেটা কীভাবে স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগে যেতে পারে। ৩৪ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে আছি। সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কেউ কোনোদিন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। অথচ একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে একটা অসত্য তথ্য দিয়ে কোর্টকে হেয় করলেন। কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করলেন। এটার জবাবদিহিতা আপনাকে করতে হবে। এ সময় ওই আইন কর্মকর্তা ডায়াসের সামনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘সম্মানের জন্য বিচারকের আসনে আছি। সম্মান যদি না থাকে তাহলে কিসের বিচার কাজ। আপনার একটা অসত্য তথ্যে টিভি চ্যানেলগুলোতে আমাদের নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হলো। আমি তো রাতে ঘুমাতে পারিনি। অথচ আমরা ওই মামলার শুনানিই করেনি। আদেশ তো দূরের কথা।’

বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমরাও তো মানুষ, আমাদেরও হৃদয় আছে। আপনার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমাদের হৃদয় ভেঙে যায়। সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ আমাদের নিয়ে একটা অসত্য তথ্য প্রচার হলো। এর দায় কে নেবে? আপনি (ডিএজি) তো আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।’

ডিএজির উদ্দেশে বিচারপতি নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ডিএজি থেকে বিচারপতি হয়। আপনারও বিচারপতি হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু আপনি একটা কোর্ট সম্পর্কে কেন এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন? আপনার কর্মকাণ্ডে বিচার বিভাগ হুমকির মুখে পড়েছে। এটা তো কোনো ছেলেখেলা নয়। নয় কোনো ফানি গেম।’

এরপর হাইকোর্ট ডিএজির উদ্দেশে বলেন, ‘বন্ধের পর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবেন।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

গায়েবি জামিন ব্যাখ্যা হাইকোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর