দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দেশটির লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে অবগারি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হলো আম আদমি পার্টির এই প্রধানকে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভিসহ ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয় কেজরিওয়ালকে। এর আগে একই মামলায় তাকে ৯ বার তলব করেছি ইডি। হাজিরা না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইডি তাকে গ্রেফতার করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই ঘিরে নেওয়া হয় কেজরিওয়ালের বাড়ি। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। পরে তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পাশাপাশি তার বাসভবনের আশপাশের এলাকায় জারি করা হয়েছে ১১৪ ধারা।
ভারতের ইতিহাসে কেজরিওয়ালই প্রথম, যিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন গ্রেফতার হলেন। এর আগে ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করেছিল ইডি। তবে তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন হেমন্ত।
ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার (২২ মার্চ) পিএমএলএ আদালতে হাজির করানো হবে আম আদমি পার্টির প্রধান কেজরিওয়ালকে। তবে দিল্লির মন্ত্রী আম আদমি পার্টির নেতা অতিশী জানিয়েছেন, কেজরিওয়ালই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তিনি জেলে বসে সরকার চালাবেন।
এদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের পরই তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আম আদমি পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। পরে দিল্লিজুড়েই তারা প্রতিবাদ শুরু করেন। পার্টির এক নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন আমাদের নেতা। আমরা এমন আশঙ্কার কথাই এতদিন বলছিলাম।’ এমন বক্তব্য পার্টি নেতাকর্মী প্রায় সবারই।
দিল্লির আবগারি মামলায় কেজরিওয়ালকে এ পর্যন্ত ৯ বার তলব করেছে ইডি। এর মধ্যে আট বারই তিনি হাজিরা দেননি। আম আদমি পার্টির অভিযোগ ছিল, ইডির লক্ষ্য কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এত দিন ধরেও তারা এই মামলায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা ভোটের আগে সমন পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ নবমবারের মতো কেজরিওয়ালকে ইডি তলব করে বৃহস্পতিবার। এবারে কেজরিওয়াল ইডিতে হাজিরা না দিয়ে ভারতের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আবেদনে তিনি লেখেন, ইডি নিশ্চয়তা দিক যে তাদের তলবে সাড়া দিলে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। হাইকোর্টে তার আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যান। জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জি জানানো হয় তার পক্ষ থেকে। তবে সেই শুনানি বৃহস্পতিবার হয়নি। শুক্রবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইডি কয়েক দিন আগে আবগারি মামলায় বিআরএস নেতা কে কবিতাকে গ্রেফতার করেছে। আদালতের নির্দেশে তিনি ইডি হেফাজতে আছেন। এ ছাড়াও এ মামলায় এখন পর্যন্ত আম আদমি পার্টির প্রবীণ নেতা সিসৌদিয়া ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংহ গ্রেফতার হয়েছেন। তারা রয়েছেন তিহাড় জেলে।
অভিযোগ রয়েছে, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিচ্ছিল। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যারা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছিল। আম আদমি পার্টি সরকার সেই অভিযোগ মানেনি। সেই নীতি যদিও পরে খারিজ করা হয়।