ভিড় বাড়লেও জমেনি ঈদের কেনাকাটা
২২ মার্চ ২০২৪ ২২:১৪
ঢাকা: পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন পেরিয়েছে। এরই মধ্যে ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে রকমারি পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সে অনুযায়ী বেচাকেনা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের দাবি— এবারের ঈদের বাজার এখনও জমে ওঠেনি।
শুক্রবার (২২ মার্চ) রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট সিটি কমপ্লেক্স, নূরজাহান শপিং মার্কেট ধানমন্ডির হকার্স মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ও গ্লোব শপিং সেন্টার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, বাহারি কারুকাজ, হাতের নকশা, ব্লক, নানা রঙের কাপড়ে রঙের ছাপসহ বিভিন্ন রঙিন নতুন পোশাকে সেজেছে বিপণিবিতানগুলো। এসেছে নতুন নতুন কালেকশনও। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইনে আনা হয়েছে নতুনত্ব। শো-রুমগুলোতেও জমকালো সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। ওই এলাকার ফুটপাতগুলোতেও বসেছে বাহারি রঙের পোশাকের পসরা।
বিপণিবিতানগুলোতে ছেলে-মেয়ে-শিশু সবার জন্যই রয়েছে সব ধরনের পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস।
এদিন দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিক্রেতাদের দাবি ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে ঠিকই তবে এখনও বিক্রি সেভাবে বাড়েনি। বেশিরভাগ ক্রেতাই দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন বলে দাবি দোকানিদের। তবে শিশুদের জন্য পোশাকের দোকানগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা চলতে দেখা গেছে।
শুক্রবার বিকেলে নিউ মার্কেটের উৎসব ফ্যাশনের বিক্রেতা মোহাম্মদ শিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার অন্যবারের চেয়ে বেচাকেনা কম। কাস্টমার এসে ঘুরে ঘুরে দেখে চলে যায়। মাঝেমধ্যে দু-একটি বেচাবিক্রি হয়।’
মার্কেটের বাইরের দোকানগুলোতে বেচাকেনা আছে। ভেতরে খুব একটা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের জান্নাত ফ্যাশনের বিক্রেতা সোহেল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনও ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়নি। আজ শুক্রবার দেখে একটু ভিড় আছে। তবে এটি অন্য যেকোনো শুক্রবারের মতোই। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা এখনও শুরু হয়নি।’
শ্যাওড়াপাড়া থেকে চার বছরের ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা নাসিমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি তার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে। কয়েকটি দোকান ঘুরেছি। কিছু কেনাকাটাও করেছি। তবে এবার দাম একটু বেশি চাচ্ছেন দোকানিরা।’
গাউসিয়া মার্কেটের সামনে কল্যাণপুর থেকে আসা তানিসা মাহবুব নামের এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার পোশাককের দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। একটি জামা কিনেছি। কিছু কসমেটিক সামগ্রী কেনার ইচ্ছা আছে। কয়েকটি দোকান দেখেছি। আরও দুয়েকটা দেখব।’
এদিন নুরজাহান সুপার মার্কেটের জুসেল ফ্যাশনের বিক্রেতা আক্ষেপ প্রকাশ করে মো. সাগর সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোজা ১০টা পেরিয়ে গেছে। এখনও বেচাকেনা সেভাবে শুরু হয়নি। বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এমনিতেই কম কিনে থাকেন। আর এবার সব ধরনের পোশাকের দামও। এজন্যও হয়তো বেচাবিক্রি কম।’
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ি ভিলেজের বিক্রেতা জাহান আহমেদ বলেন, ‘আজ শুক্রবার হওয়ায় মার্কেটে ভিড় থাকলেও বেচাকেনা কম। বহু কাস্টমার দেখে চলে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।’
এদিন বিপণিবিতানগুলোর বিক্রয়কর্মীরা জানান, সকাল থেকেই লোকজন আসছেন। যদিও বেচাকেনা কম হয়, তবুও বিপুল সংখ্যক ক্রেতার আগমন দেখে বিক্রেতারা খুশি। তাদের ভাষ্য বেশি লোকজন মার্কেটে আসলে বেচাকেনা কিছু না কিছু হবেই।
গ্লোব শপিং সেন্টারের সামনে মহাখালী থেকে আসা আশফাক হোসেন বলেন, ‘ঈদের জন্য পাঞ্জাবির কিনতে এসেছিলাম। কিনেছি তবে দাম কিছুটা বেশি নিয়েছে। জুতো কেনারও ইচ্ছা আছে।’
তবে চুড়ি, ফিতাসহ প্রসাধনীর দোকানগুলোতে ছিল তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী নারীর ভিড় থাকলেও বেচাকেনা একেবারেই কম। গাউসিয়ার লাইস বিউটি কনসেপ্টের বিক্রেতা শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাস্টমার নেই বললেই চলে। কাস্টমার এসে ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন। এবার ব্যবসার অবস্থা খারাপ।’
এদিকে রমজান মাসজুড়ে ঈদ কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে এবং যানজট মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
নিউমার্কেটে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। সেখানে দায়িত্বরত নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রায়হান উদ্দিন শুক্রবার বিকেলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের ভোগান্তি কমাতে পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা নিউমার্কেট এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে কাজ করছে। নির্বিঘ্নে ঈদের কেনাকাটা করতে এবং যানজট মোকাবিলা করতে বিশেষ ব্যবস্থায় আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনিটরিং ও নিরাপত্তা জোরদারের স্বার্থে নিউমার্কেট থানার উদ্যোগে এই কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মার্কেটে আসা লোকজনকে সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বদা তৎপর আছি।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে