Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিল্পাচার্যের ২ পেইন্টিং সোয়া ৭ কোটি টাকায় বিক্রি

সারাবাংলা ডেস্ক
২৩ মার্চ ২০২৪ ০১:২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নিলামে তোলা হয়েছিল শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিনের দুটি চিত্রকর্ম। সে দুটি বিক্রি হয়েছে প্রায় সোয়া সাত কোটি টাকায়। এর মধ্যে ‘সাঁওতাল দম্পতি’ চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ৮১ হাজার মার্কিন ডলারে, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা। নিলামে বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর চিত্রকর্মের এটিই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড বলে জানাচ্ছেন শিল্পবোদ্ধারা।

বিজ্ঞাপন

নিলামে বিক্রি হওয়া দ্বিতীয় চিত্রকর্মটির কোনো নাম জানা যায়নি। সেই চিত্রকর্মটিতে বসে থাকা একজন নারীকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল। এই শিল্পকর্মটিও তিন কোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সোদেবি’স নিউইয়র্কে ‘মডার্ন অ্যান্ড কনটেম্পোরারি সাউথ এশিয়ান আর্ট’ শীর্ষক নিলাম আয়োজন করে। ১৮ মার্চ সেখানেই বিক্রি হয় শিল্পাচার্যের চিত্রকর্ম দুইটি।

সোদেবি’সের ওয়েবইটে দেওয়া তথ্য বলছে, নিলামে ‘সাঁওতাল দম্পতি’ ছবিটির মূল্য ধরা হয়েছিল এক লাখ থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলার। শেষ পর্যন্ত সেটি বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ৮১ হাজার ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় চার কোটি ১৭ লাখ সাড়ে ছয় হাজার টাকা।

অন্যদিকে বসে থাকা নারীর পেইন্টিংটির দাম রাখা হয়েছিল ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এটিও তিনগুণেরও বেশি মূল্যে বিক্রি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এর দাম উঠেছে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার বা তিন কোটি ছয় লাখ টাকার কিছু বেশি।

চিত্রকলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে এই দুটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ছবির অন্যতম।

এর আগে ২০১৮ সালে নিউইয়র্কের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিসটিজে জয়নুল আবেদিনের সাঁওতাল সিরিজের আরেকটি চিত্রকর্ম নিলামে বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় কোটি টাকায় বিক্রি হয়।

চিত্রকর্ম দুটি সম্পর্কে যা জানা যায়

জয়নুল আবেদিনের আঁকা ‘সাঁওতাল দম্পতি’ পেইন্টিংয়ে দেখা যায়, মাথায় মাথাল পরে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক যুগল। ছবিটি জয়নুল আবেদিন এঁকেছিলেন ১৯৬৩ সালে। পেইন্টিংয়ের ওপরে তার নাম সই করা আছে। তেলরঙ দিয়ে ক্যানভাসে আঁকা পেইন্টিংটি প্রস্থে ১০২ সেন্টিমিটার, দৈর্ঘ্যে ১৩৫ দশমিক পাঁচ সেন্টিমিটার।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় পেইন্টিংয়ে একজন নারীকে এঁকেছেন শিল্পাচার্য। ছীবতে লাল চুড়ি হাতে এবং আকাশি নীল রঙা শাড়ি পরে একজন ক্লান্ত নারীকে বসে থাকতে দেখা যায়। ছবিটি ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৩ সালের মাঝে তেলরঙ দিয়ে বোর্ডের ওপর আঁকা হয়। এর দৈর্ঘ্য ৮০ দশমিক চার সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৬০ দশমিক চার সেন্টিমিটারের একটু বেশি।

সোদেবি’সের ওয়েবইটে দেওয়া তথ্য বলছে, দুটি চিত্রকর্মই জামশেদ কে মার্কার ও ডিয়ানা জে মার্কারের পারিবারিক সংগ্রহশালায় ছিল। সাঁওতাল দম্পতি ছবিটি প্রাপ্তির উৎস হিসেবে বলা আছে, ১৯৬৩ সালে সরাসরি শিল্পীর কাছ থেকে জামশেদ কে মার্কার ও ডিয়ানা জে মার্কার এটি পেয়েছিলেন।

মার্কার দম্পতি জয়নুল আবেদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি প্রায়ই এই দম্পতির বাড়িতে যেতেন। ওই সময় রশীদ চৌধুরীসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কজন বিখ্যাত শিল্পীকে মার্কার দম্পতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জয়নুল আবেদিন।

এসব তথ্য দিলেও চিত্রকর্ম দুটি কে কিনেছেন, সে বিষয়ে সোদেবি’সের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া চিত্রকর্ম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক নিসার হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, তার জানামতে এর আগে বাংলাদেশি কোনো শিল্পীর আঁকা পেইন্টিং এত দামে বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, আমার জানামতে বাংলাদেশি কোনো শিল্পীর এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ছবি নেই। তিন লাখ ৮১ হাজার ডলার হাইয়েস্ট এখন পর্যন্ত। তবে (আমার) অজানা আরও থাকতে পারে।

সোদেবি’সের এই নিলাম বেশ সুপরিচিত জানিয়ে অধ্যাপক নিসার বলেন, উপমহাদেশের অনেক ছবিই (নিলামে) গেছে। আরও অনেকের ছবি বিক্রি হয়েছে। এটা খুব কমন। প্রতিমাসেই কিছু না কিছু বিক্রি হতে থাকে।

চিত্রক গ্যালারির নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বিবিসিকে বলেন, জয়নুল আবেদিন স্যারের আঁকা পেইন্টিং… এগুলো অমূল্য। তাই অরিজিনাল হলে এমন দাম হতেই পারে। জয়নুল আবেদিন, শফিউদ্দিন, কামরুল কিংবা এস এম সুলতানের মতো যারা আছেন, তাদের ছবির দাম ওই রকম হতে পারে।

এই শিল্পীও বলেন, তিন কোটি বা বিশেষ করে চার কোটি টাকার কাছাকাছি দামে এর আগে সম্ভবত বাংলাদেশি কারও চিত্রকর্ম বা পেইন্টিং বিক্রি হয়নি।

সারাবাংলা/টিআর

চিত্রকর্ম নিলাম টপ নিউজ শিল্পাচার্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর