হরিণাকুণ্ডুতে মালিক সমিতির তদবিরে চলছে অবৈধ ইট ভাটা
২৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪২
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তদবিরে চলছে অবৈধ ইট ভাটা। জানা যায়, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় মোট ১৮ টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৮ নং চাঁদপুর ইউনিয়নে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫টি অবৈধ ইটভাটা। সড়কের পাশে ফসলী জমি ঘেঁষে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর এম.এস.বি ব্রিকস, বাবুল হোসেন খানের আরএসবি ব্রিকস, আলমগীর হোসেনের আনিশা অ্যান্ড তানিশা ব্রিকস, শিতেলীপাড়া হাকিমপুর এলাকায় মিলন অ্যান্ড জান্নাত ব্রিকস, পারমথুরাপুর এলাকায় এ.জে.বি ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে। যেগুলোর নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রসহ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স। তবুও অবৈধ ইট ভাটার ব্যবসা চলছে রমরমা।
এম.এস.বি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, কাঁঠাল, খেঁজুর, নারকেলসহ সবুজ বনায়ন ধ্বংস করে শত শত মন বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ মজুদ করা হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বাঁশের মোথা ও খেজুর গাছসহ অন্যান্য জ্বালানি কাঠ। ফলে চুল্লি থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। এছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে স্তুপ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক ও একাধিক বাসিন্দারা জানান, ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় ধুলোবালিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার নিজস্ব মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে প্রায়ই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।
এম.এস.বি ইটভাটার পাশে বসবাসরত আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই ইটভাটায় দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হচ্ছে চারপাশ।
আক্কাস আলী নামের আরেক বাসিন্দা জানান, ইটভাটার ধুলোবালিতে ঘরবাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি এ সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করার দাবি জানান।
জানা যায়, বছরে দুই-একবার পরিবেশ অধিদফতর নামমাত্র অভিযান চালিয়ে সামান্য কিছু জরিমানা করলেও সেগুলো পরবর্তীতে আবার চালু হয়ে যায়। আর হরিণাকুণ্ডতে যতগুলো অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সবগুলোই বিভিন্ন ভাবে তদবির করে অনৈতিক উপায়ে পরিচালনা করছে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁ।
ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের বিষয়ে কথা হয় হরিণাকুণ্ডু ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর বলেন, ‘শুধু ঝিনাইদহে না সারা দেশেই অবৈধ উপায়ে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। আপনারা পারলে ইটভাটা বন্ধ করে দেন।’
ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান জানান, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইট ভাটা রয়েছে যাদের কারোরই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। মূলত আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে অভিযান পরিচালিত করতে হয় যে কারণে কিছুটা সময় লাগে। তবে পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে।’
সারাবাংলা/একে