Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাঙ্গামাটি মেডিকেলের জন্য বাড়তি ব্যয় প্রস্তাব, কমিশনের আপত্তি

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ মার্চ ২০২৪ ১০:০৬

ঢাকা: ‘রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পে নানা খাতে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এতে আপত্তি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ২৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল বাকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিইসি সভায় এসব বিষয়ে আলোচনার পর সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে এই প্রস্তাবের অবস্থা কী সেটি আমি বলতে পারব না। কেননা ইতোমধ্যে আমি আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে বদলি হয়েছি। তবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়তি ব্যয় বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন। পরিকল্পনা কমিশন সবসময় চেষ্টা করে যাতে অহেতুক কোনো ব্যয় না হয়।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচিতে নেওয়া সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে সবার জন্য আর্থিক নিরাপত্তাসহ সমতাভিত্তিক গুণগত মানের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে, যা ইউনিভার্সেল কভারেজ (ইউএ্চইসি) এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। বর্তমানে দেশে ৩৭টি সরকারিসহ মোট ১১৩টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। প্রতিবছর মেডিকেল কলেজে ১০ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। দেশে ডাক্তারের অনুপাত প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং রেজিস্টার্ড নার্স ও মিডওয়াইফের অনুপাত প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার ৪ দশমিক এক শতাংশ। যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কম।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া দেশে প্রতি ১০ হাজার জনংখ্যার জন্য হাসপাতাল শয্যা সংখ্যা ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যার মধ্যে সরকারি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও বেসরকারি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সর্বোপরি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকায় জটিল রোগের গুণগত মানের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার হার প্রত্যাশার তুলনায় কম। মেডিকেল ও নার্সিং গ্রাজুয়েটের চরম সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নতুন মেডিকেল ও নার্সিং কলেজ স্থাপন করে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রস্তাবে আরও বলা, বিশেষায়িত হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতর এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করে। এর ওপর গত বছরের ৮ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে এটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত

আসবাবপত্র খাতে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্ননের (বিএফআইডিসি) মূল্য তালিকা ২০১৯-২০ অনুযায়ী প্রকল্প কার্যালয়ে ৫১টি, মেডিকেল কলেজে ৭ হাজার ৫৭৪টি, নার্সিং কলেজে ২ হাজার ৭২টি ও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৬ হাজার ৬৮৮টিসহ মোট ১৬ হাজার ৩৮৫টি আসবাবপত্রের জন্য ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই ব্যয় প্রস্তাবকে অন্যান্য মেডিকেল কলেজের তুলনায় অত্যাধিক বলে মনে করেছে কমিশন।

এ ছাড়া, পূর্ত কাজের আওতায় প্রায় ২২টি আবাসিক বা অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অধিদফতরের রেট সিডিউল ২০২২ অনুযায়ী মোট ১ হাজার ১১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ভবনগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদফতরের স্পেশাল ক্যাটাগরির নির্মাণ দর হিসাব করা হয়েছে। যেখানে প্রিন্সিপাল ও পরিচালকদের বাসভবনের নির্মাণ দর প্রতিবর্গফুট ৮ হাজার টাকা, ছাত্র হোস্টেল ভবনপ্রতি বর্গফুট ৭ হাজার ৫৮৫ টাকা এবং স্টাফ ডরমিটরি প্রতিবর্গফুট ৭ হাজার ৬২২ টাকা। একইভাবে ই বা এম কাজের ক্ষেত্রেও যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্য প্রাক্কলন করা হয়েছে। তাই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) পূর্ত ই/এম কাজের খসড়া পুনঃযাচাই করতে হবে।

ডিপিপির প্রাক্কলন এবং ডিটেইল্ড ফ্লোর প্ল্যানে হসপিটাল ভবন ও একাডেমিক ভবনের জন্য সাত তলা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও অনুমোদিত মাস্টার প্ল্যানে ছয় তলা ভিতে ছয় তলা ভবন নির্মাণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার। অন্যদিকে, বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য অনুমোদিত মাস্টার প্ল্যানে তিন তলা ভিতে তিন তলা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও ডিপিপিতে দুই তলা ভিতে দুই তলা ভবন নির্মাণের প্রাক্কলন করা হয়েছে। যা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা প্রয়োজন বলে সভায় আলোচনা হয়েছে।

প্রস্তাবিত সব ভবনের দুই তলা পর্যন্ত পাইল ফাউন্ডেশন প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এছাড়া এসটিপি বাবদ ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং ডব্লিউটিপি বাবদ ৬ কোটির জন্য নির্মাণ দর প্রাক্কলন জানা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর অথবা চট্টগ্রাম ওয়াসার দর বিবেচনা করে এ বিষয়ে যৌক্তিক আলোচনা দরকার।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

বাড়তি ব্যয় প্রস্তাব রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর