কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য : মেয়রের অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
২৪ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলী নদীর বুকে জেগে ওঠা বাকলিয়ার চরে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা বন্ধ ঘোষণার জন্য এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছে পরিবেশ আন্দোলনে যুক্ত ছয়টি সংগঠন। অন্যথায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ কর্মীরা।
ছয় সংগঠনের সম্মিলিত মোর্চা ‘কর্ণফুলী রক্ষায় জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চ’ রোববার (২৪ মার্চ) সকালে বাকলিয়া চরে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনগুলো হল- চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, আরএসকে ফাউন্ডেশন ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন।
প্রতিবাদ মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার উজানে কর্ণফুলী নদীর মাঝে একটি চর জেগে ওঠে যা বাকলিয়া চর নামে পরিচিতি পায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চরের মোট আয়তন ১০৫ একর। চরটিতে বর্জ্য শোধনাগার করার জন্য ভূমি বরাদ্দ চেয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। চীনের একটি প্রতিষ্ঠান এজন্য সেখানে মাটি পরীক্ষার কাজ করছে।
এর বিরোধিতা করে সমাবেশে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী নদীর নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নদীর মাঝখানে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প করা অবৈধ। সুতরাং এ প্রকল্প বাস্তবায়ন মানে কর্ণফুলী নদীকে হত্যা করা, যা সংবিধানের লঙ্ঘন। পরিবেশ সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপিনিয়নের (ইকো) গবেষণায় বলা হয়েছে, ৫৩টি শিল্পসহ ৮৯টি উৎস থেকে কর্ণফুলী নদী দূষিত হচ্ছে। এতে কর্ণফুলী নদীর তীরে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্ত হওয়ার পথে আছে। দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা না নিলে আরও ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়বে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্জ্য শোধনাগার হলে এ নদীর তীরে উদ্ভিদের আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। এছাড়া কর্ণফুলীর নাব্যতাও হুমকির সম্মুখীন হবে।
এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাকলিয়া চরে হবে না মর্মে ঘোষণা না দিলে সিটি মেয়রের কার্যালয় ঘেরাওয়ের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
এতে প্রতিবাদ মঞ্চের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘জনগণের দাবি সসম্মানে মেনে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প স্থাপন বন্ধ করুন। মেয়র সাহেব, আমাদের বাধ্য করবেন না। মুক্তিযোদ্ধা, যুব সমাজ, সাম্পান মাঝিরা লাঠি-বৈঠা নিয়ে আপনার কার্যালয় ঘেরাও করবে। দেশকে ধ্বংস করে কার স্বার্থে কিসের এই প্রকল্প ?’
অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘নদী ভরাট হয়ে জেগে ওঠা দ্বীপ এমনিতে কর্ণফুলীকে দুইভাগ করেছে। উন্নয়নের নাম দিয়ে এই চর বা দ্বীপে বিষাক্ত বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আত্মঘাতি, যা কর্ণফুলীকে হত্যা করবে। চসিক মেয়রকে এই কাজ করার কুপরামর্শ যারা দিয়েছে তারা দেশের শত্রু। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ অন্যায় প্রতিহত করবে।’
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘কর্ণফুলীর বুকে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আনন্দবাজারে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্থাপিত একটি বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প অচল পড়ে আছে। সেটাকে সচল না করে নতুন করে নদীকে হত্যা করে বর্জ্য শোধনাগার কার স্বার্থে ? এ প্রকল্প বন্ধ ঘোষণা করলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো।’
ভাসমান মঞ্চে সংবাদ সম্মেলনে রাজনীতিবিদ মিটুল দাশগুপ্ত, যুবলীগ নেতা হেলাল চৌধুরী, পরিবেশ সংগঠক শারুদ নিজাম, নারীনেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু, ক্যাব নেতা জানে আলম, তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সিঞ্চন ভৌমিক, আরকেএস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী জাহেদুল করিম বাপ্পীও উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ