উপাচার্যের অনিয়মের প্রতিবাদে কুবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন
২৫ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫৬
কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে প্রশাসনিক ভবনে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য’র সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, কুবি শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি ও বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনের সঞ্চালনা করেন শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান। এতে বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের,অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার, অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন মজুমদার,অধ্যাপক ড.শেখ মুকছেদুর রহমান, অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান। নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল হক, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.জান্নাতুল ফেরদৌস, রসায়ন বিভাগপর সহযোগী অধ্যাপক ড.মো. শাহাদাৎ হোসেন।
গ্রেড-২ পদে পদোন্নতি বঞ্চিত অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন সরকার উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনি যেসব আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, সেগুলো আইনের মধ্যে নিয়ে আসেন। আমরা এ কর্মসূচিতে থাকতে চাই না। আমরা শিক্ষক, ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যেতে চাই।
তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতি থেকে যে সাতটি দাবি দেওয়া হয়েছে। এ দাবিগুলোর দুই-একটি ছাড়া বাকী দাবিগুলো পূরণ করার জন্য কোনো ধরনের সিন্ডিকেট লাগে না। আপনি চাইলেই শিক্ষক সমিতির সঙ্গে কথা বলে দাবিগুলো সমাধান করতে পারেন। কিন্তু আপনি (উপাচার্য) এ দাবিগুলো পূরণ করছেন না। আপনি কী চাচ্ছেন শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে না যাক?
তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদে বারো জন অধ্যাপকের পদোন্নতি দু’বছর ধরে আটকে রেখেছেন। ২০২২ সালে ওই বিষয়ক কমিটি হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, উপাচার্য নিয়োগের পর থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং যে সকল আর্থিক কেলেঙ্কারির করে যাচ্ছে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ উপাচার্য শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। শিক্ষকরা আজ নানা রকম বৈষম্যের শিকার।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিনি বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও দুই বছর ধরে কমিটির নাম করে শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধিমালা উপেক্ষা করে নিজের পছন্দমতো একেকজনকে একেক রকম শর্ত আরোপ করে শিক্ষকদের পদোন্নতি বৈষম্য তৈরি করেছেন। এছাড়াও স্থায়ী করণের ক্ষেত্রে একই পাবলিকেশন দিয়ে কাউকে স্থায়ী করছেন, কাউকে করছেন না। শুধু তাই নয় প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির দরদাতা কোম্পানিকে কাজ না দিয়ে ২৬ লাখ টাকা বেশি ব্যয়ে নাম সর্বস্ব কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে এ তথ্যও আমাদের কাছে রয়েছে। তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করছেন না বরং সরকারের ক্ষতি করছেন।
ড. মো. আবু তাহের আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির টাকা কোন খাতে এবং কিভাবে ব্যয় করেন সেটার হিসেব আমরা কেউ জানি না। নিয়ম না মেনে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। প্রতি বছরে উপাচার্যের টাকা বাড়ে অথচ শিক্ষকদের উপর ট্যাক্স কর্তন করে টাকা কেটে নেওয়া হয়। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষকদের সাথে উপাচার্যের ভর্তি পরীক্ষা সম্মানির অনুপাতের পার্থক্য দুই কিংবা তিনগুণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে অনুপাতের ব্যবধান আট-দশগুণ।
শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উপাচার্য হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মিথ্যাচার করেন। এমনকি শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মানেন না। নিজের মতো খেয়াল খুশি মতো কাজ করেন।
উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনি যে নিয়ম না মেনে ইনক্রিমেন্ট নিচ্ছেন সেটার সুদ সহকারে ফেরত দিতে হবে। একজন সর্বোচ্চ অথরিটি যদি আর্থিক কেলেঙ্কারির করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কখনও উন্নতি হতে পারে না।
উল্লেখ্য, শিক্ষকদের সাত দফা দাবিসমূহ হলো—উপাচার্যের উপস্থিতিতে শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচার, প্রক্টরের অপসারণ, ঢাকাস্থ গেস্টহাউস অবমুক্ত করা, অধ্যাপকদের পদোন্নতি, আইন মোতাবেক বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে আইন বহির্ভূত অবৈধ শর্ত আরোপ নিষ্পত্তিকরণ, বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা রহিত করণ, ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল। গত ১৩ ও ১৪ মার্চ এবং ১৯ থেকে ২৭ মার্চ সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা।
সারাবাংলা/এনইউ