Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দিনে-দুপুরে নেই ১৫০ গাছ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:০৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে নানা প্রজাতির অন্তত দেড়’শ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের জন্য কাটা হয়েছে প্রায় এক’শ গাছ। বাকি গাছ কেটেছে গরীবউল্লাহ শাহ মাজার কর্তৃপক্ষ। তারা বন বিভাগে গাছ কাটার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করেই গাছগুলো কেটে সাবাড় করে।

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত নগরীর দামপাড়ায় গরীবউল্লাহ শাহ মাজারসংলগ্ন পাহাড়ে এবং পাঁচলাইশে সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় এ গাছ কাটার মহোৎসব চলে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন উত্তর বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মালেক সারাবাংলাকে জানান, গরীবউল্লাহ শাহ মাজার কর্তৃপক্ষ পাহাড় থেকে গাছ কাটার আবেদন করেছিল। কিন্তু এরপর তারা আর যোগাযোগ করেনি। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই তারা মাজারের পেছনে কবরস্থান ও পাহাড় থেকে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলে।

‘কেটে ফেলা কড়ই ও রেইনট্রি জাতের গাছগুলো থেকে অন্তত ২১৪ ঘনফুট কাঠ হবে, যার বাজার মূল্য সাড়ে ৫৩ হাজার টাকা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসন থেকে বন বিভাগকে খুলশী থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি,’- বলেন বন বিভাগের এ কমকর্তা।

সোমবার বিকেলে গাছ কাটার খবর পেয়ে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) মাজহারুল ইসলাম, আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী ও বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আব্দুল মালেক।

বিজ্ঞাপন

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাজার কর্তৃপক্ষ কবরস্থানের জায়গা বাড়ানোর জন্য বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই ৪০-৪২টি গাছ কেটে ফেলেছে। পাহাড় থেকে এমনভাবে গাছ নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, এতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। খাস জমি থেকে গাছ কাটতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। তারা সেটারও তোয়াক্কা করেনি।’

এদিকে, একই সময়ে নগরীর পাঁচলাইশে সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় সড়কের দু’পাশে শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। জানা গেছে, সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য গাছগুলো কেটেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। স্থানীয় কাউন্সিলর গাছকাটা তদারকি করেন। তবে এখন কাউন্সিলর কিংবা ঠিকাদার কেউই দায়দায়িত্ব স্বীকার করছেন না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। রাস্তার দুইপাশে সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ছোট, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে নানা প্রজাতির আনুমানিক একশ’র মত গাছ হবে সেখানে। সুগন্ধা আবাসিক কল্যাণ সমিতির লোকেরা এ বিষয়ে ভালো জানবেন। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে মেয়র মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুগন্ধা আবাসিক কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার অনেক বয়স হয়েছে। হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। আমার বড় মেয়ে ও তার জামাই এসে আমাকে জানায়, সিটি করপোরেশনের লোকজন এসেছে। তারা রাস্তা প্রশস্ত করবে। এজন্য গাছগুলো কেটে ফেলবে। এ এলাকায় অনেক গাড়ি চলে। তাই সড়ক প্রশস্ত করা প্রয়োজন ছিল। আর কাউন্সিলর নিজে এসেছেন শুনে আমি আর কিছু বলিনি।’

চসিকের ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওখানে যাইনি। আমি একজন দায়িত্ববান মানুষ। গাছ কাটতে হলে আমি কী পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই কাটব? ওখানে রাস্তার কাজ চলছে, আমি এতটুকু জানি। কারা গাছ কেটেছে, সেটা আমি জানি না।’

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

গরীবুল্লাহ শাহ মাজার গাছ চসিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর