Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ওঁৎ পেতে বসে আছে, কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:২৩

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

ঢাকা: একাত্তরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জন করলেও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করে বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করতে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই সবাইকে সবসময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময়ের দারিদ্র্য ও জরাক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। এই বাংলাদেশ কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। যতই ষড়যন্ত্র হোক, বাঙালি প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবে।

সোমবার (২৫ মার্চ) ৫৪তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি রমজানের মোবারকবাদও জানান।

আরও পড়ুন- ‘ঈদে ১০ কেজি করে চাল পাবে ৬২ হাজার পরিবার’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগ যুগ ধরে আমাদের এই ভূখণ্ড ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্যবস্তু ছিল। নানা সময়ে বিদেশি শক্তিরা এ দেশ নিজেদের কবজায় নিয়ে শাসন করেছে, সম্পদ লুট করেছে, শোষণ করেছে। কোনোদিনই বাঙালি পরিপূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে মুক্তিলাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য, আমাদের এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ওঁৎ পেতে বসে আছে, কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনো তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নিচিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য।

এ পরিস্থিতিতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার। বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— জাতির পিতা নির্দেশিত এ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে আমরা দেশ পরিচালনা করি। আমাদের কোনো প্রভু নেই, আছে বন্ধু। তাই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর অস্ত্রের মুখে সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে কায়েম করে একনায়কতন্ত্র। স্থবির হয়ে পড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের জাতির পিতার নেওয়া সব কার্যক্রম। জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলাতে বিভোর হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন- ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সম্পদেও দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়’

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছরের ইতিহাস এ দেশের মানুষের নিপীড়ন আর বঞ্চনার ইতিহাস। এ সময় লুটপাট, দুর্নীতি, ইতিহাস বিকৃতি, মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌল চেতনাকে ধূলিস্যাৎ করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও পশ্চাৎপদ দেশের তকমা পরিয়ে দেওয়া হয়। নিদারুণ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অকালমৃত্যু এবং শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার অভাব ছিল এ দেশের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাধারণ মানুষ এসব বঞ্চনাকে ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিত। তখন মানুষকে বুঝতেই দেওয়া হয়নি যে তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে কিছু আছে।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশের মানুষের ভাগ্যের বদল হয় বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন-দুঃস্থ মানুষের জন্য বয়স্ক ভাতা, দুঃস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, নিরক্ষরতা দূর করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তার, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি আমরা। এই প্রথম সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে তাদেরও সরকারি সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অর্জনের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এই সময়ে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। উল্লেখ করেন ২০১৩-১৪ সাল ও ২০১৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাসের কথা।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও বিএনপি এবং তার মিত্ররা হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসংযোগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে এবার তারা পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। তবু তাদের হাতে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। এসব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

উন্নত বাংলাদেশের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হবে। যে উন্নয়ন-অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত সাধন করেছি, আমাদের লক্ষ্য— সেই ধারা আরও এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪তম দিবসে আসুন, সব কূটকৌশল-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিত্যপণ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর